৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামীকাল (শুক্রবার) বিএনপি-জামায়ত জোট সারাদেশে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলটির একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবের সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ করে। পরে দলের পক্ষে ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের বিষয়টি তুলে ধরেন প্রতিনিধি দলের প্রধান ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা আক্তারুজ্জামান।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের প্রধান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এমন তথ্য আওয়ামী লীগের কাছে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আগামীকাল বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে; এমনকি ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপিয়ে একটি ভুয়া বুথ তৈরি করে নকল ভিডিও বানিয়েও গুজব সৃষ্টি করতে পারে।’
আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের বিভিন্নস্থানে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগসহ অন্য সব গণতান্ত্রিক দলের ও মহাজোটের অফিস ভাঙচুর, মিছিলে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করছে। নিজেরাই সহিংসতা সৃষ্টি করে উল্টো নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছে। মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী হামলায় সারাদেশে আওয়ামী লীগের ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন দাবি করে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘তারা ১৭টি জেলার ২২টি নির্বাচনি এলাকার ১০টি আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর ও ৭টিতে অগ্নি সংযোগ করে, ১০টি স্থানে বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণ করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা ইতোপূর্বে যেসব অভিযোগ করেছিলেন, সে বিষয়ে ইসি কী ব্যবস্থা নিয়েছে সচিবের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। সচিব বলেছেন, তারা অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলেছেন। কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে পরবর্তী সময়ে তা জানানো হবে।’
গত দুই সপ্তাহে দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারের উদ্বেগ প্রকাশের জবাবে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তার এই বক্তব্যকে দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক রাজনীতি হিসেবে দেখি। নির্বাচনকালীন সন্ত্রাসে কে চ্যাম্পিয়ন, তা পরপর দুটি নির্বাচনের চিত্র দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেশের জনগণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ভোটবর্জন ও নির্বাচন ঠেকানোর নামে ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের হত্যা করা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই—এসবের নিরিখে আমি মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, তাদের (বিএনপি-জামায়াত) সংহিসতা সৃষ্টির ঐহিত্য ও ইতিহাস আছে।’
এ বিষয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। বাংলাদেশকে বটমলেস বাক্সেট বলে অসত্য তথ্য দিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘‘১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পরে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বলেছিলেন ‘আটলান্টিক মহাসাগর পার হলে তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে যায়।’ ভারতসহ পৃথিবীর অন্য দেশে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কোনও বিদেশি রাষ্ট্রদূত কোনও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে এভাবে কথা বলতে পারেন না। তিনি সহিংসতার কথা বলেছেন, সহিংসতা কোথায় হয় না? পৃথিবীর অনেক দেশেই নির্বাচনে সহিংসতা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রচুর সহিংসতা হয়। এখন কে বেশি সহিংসতা করছে, এটা যাচাইয়ের বিষয়।