কৃষি খাতে বর্গাচাষিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে অশিক্ষিত লোকদের সংখ্যায় বেশি। শিক্ষিত লোকদের মধ্যে কৃষিচাষে আগ্রহ খুবই কম।
দেশের বিভিন্ন জেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এসব জেলায় বেশির ভাগই প্রাচীন বা অশিক্ষিত মানুষ কৃষিচাষে সম্পৃক্ত। শিক্ষিত লোকজন কৃষি ক্ষেত্রে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)'র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্গা দেয়া জমির প্রায় ৬৫ শতাংশই আবাদ করছে ভূমিহীন কৃষকরা।
দেশে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এখনো ব্যাপক মাত্রা পায়নি। চাষের ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ হলেও ফসল রোপণ ও বপন, ঝাড়াই-মাড়াই এখনো প্রথাগত পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধ। কৃষির বাণিজ্যিকীকরণও হচ্ছে না। ছোট ছোট জমির কারণে বড় পরিসরে খামারভিত্তিক কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষিজমির মালিকরা। কৃষিজমি বর্গা দিয়ে অন্য পেশায় স্থানান্তর হচ্ছেন তারা। তাদের ছেড়ে দেয়া এ জমি আবার বর্গা নিতে চাইছেন না ছোট কৃষকরা। প্রান্তিক মানুষই শেষ পর্যন্ত এসব জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছেন।
বিআইডিএসের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দ্য রাইজ অব ল্যান্ডলেস টেন্যান্সি ইন রুরাল বাংলাদেশ: অ্যানালাইসিস অব দ্য রিসেন্ট এভিডেন্স’ শীর্ষক গবেষণাও এর প্রমাণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ এবং প্রয়াত অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন ও অধ্যাপক আবদুল বায়েসের ৬২ গ্রাম প্যানেল সার্ভের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি গবেষণায় দেখা যায়, কয়েক দশক ধরেই গ্রামীণ এলাকায় জমি বর্গা দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ১৯৮৮ সালে মাত্র ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ জমি বর্গা দেয়া হলেও ২০১৪ সালে তা সাড়ে ৪৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গ্রামীণ অঞ্চলের অর্ধেক জমিই এখন বর্গা দেয়া হচ্ছে। আবার বর্গা দেয়া এসব জমি আবাদ করছেন ভূমিহীন কৃষক। সারা দেশে বর্গা দেয়া জমির ৬৪ দশমিক ৪৬ শতাংশই আবাদ করছেন ভূমিহীনরা। এছাড়া ফাংশনাল ভূমিহীনরা আবাদ করছেন ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ জমি।
বর্গা চাষের প্রভাব কৃষি উৎপাদনের ওপর পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অদক্ষ এ বর্গা ব্যবস্থাপনার কারণে জমি আবাদ করেও বড় পুঁজি বা মূলধন জোগাড় করতে পারছেন না ভূমিহীন কৃষকরা। ফলে জমির মালিকানা পাচ্ছেন না তারা। বড় কৃষকদের বর্গা দেয়া জমিই আবাদ করতে হচ্ছে তাদের।
‘৬২ গ্রাম প্যানেল সার্ভে’র তথ্য উল্লেখ করে বিআইডিএসের গবেষণার তথ্য বলছে, গ্রামে জমি বর্গা দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ১৯৮৮ সালে মাত্র ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ জমি বর্গা দেয়া হতো। ২০০০ সালে তা ৩২ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়। ২০০৮ সালে বর্গা দেয়া জমি আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৮ ও ২০১৪ সালে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশে।