সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনের ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি (বিএনপি ধানের শীষ প্রতীকের) প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিলেট ও সুনামগঞ্জের দুই থানায় আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহফুজুর রহমান বলেন, শাহীনুর পাশা সিলেট শহরে বসবাস করায় গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট কোতোয়ালি থানা ও তাঁর নিজ এলাকা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানায় পাঠানো হয়েছে।
গত ১৩ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য প্রবাসী ঢাকার বনানীর বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী তালুকদার বাদী হয়ে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মাওলানা শাহীনুর পাশার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।
আবাসন ব্যবসার কথা বলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রতারণা করে ৩২ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করা হয়। সেই মামলায় মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত এই পরোয়ানা জারি করেন।
মামলা ও সরকারি কৌঁসুলির সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী তালুকদারের অভিযোগ শাহীনুর পাশার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে তাঁর পরিচয় হয়। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে তাঁর ‘মাতৃভূমি হাউজিং ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’ নামে একটি আবাসন প্রকল্প আছে জানিয়ে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মোহাম্মদ আলী তালুকদারকে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হওয়ার প্রস্তাব দেন মাওলানা শাহীনুর পাশা।
মোহাম্মদ আলী ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর থেকে কয়েক দফায় ৩২ লাখ ২০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু শাহীনুর পাশা তাঁকে না জানিয়ে একপর্যায়ে প্রকল্পটি বিক্রি করেন। এরপর থেকে বারবার যোগাযোগ করলে শাহীনুর টাকা ফেরত দেননি।
চলতি বছর শাহীনুর টাকা পরিশোধের জন্য ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের একটি চেকে ৫ লাখ টাকা দেন। একই ব্যাংকের ভিন্ন ভিন্ন তারিখে আরও তিনটি চেকসহ মোট ২০ লাখ টাকার চেক দেন। কিন্তু এসব চেক নগদায়নের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় জমা দিলে ডিজঅনার হয়।
এরপর শাহীনুরের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি জানান, ৩২ লাখ ২০ হাজার টাকার লভ্যাংশসহ ফেরত দেবেন। গত ২২ অক্টোবর শাহীনুর পাশা তাঁর পরিচিত এই মামলার সাক্ষীর উপস্থিতিতে পাওনা টাকার কথা অস্বীকার করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মামলা করেছেন।
শাহীনুর পাশা চৌধুরীর সাথে মঙ্গলবার রাতে মামলার অভিযোগ ও গ্রেফতারি পরোয়ানার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা দায়েরের বিষয়টি এই মুহুর্তে আমার জানা নেই। তবে মোহাম্মদ আলী তালুকদার টাকা পাওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।
উল্ল্যেখ যে, ২০০৫ সালের ২০ জুলাই সুনামগঞ্জ-৩ আসনে উপনির্বাচনে শাহীনুর পাশা চৌধুরী চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মান্নানের সঙ্গে পরাজিত হন। এবার ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের প্রার্থী হিসাবে ফের সুনামগঞ্জ – ৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে এ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা) প্রতীকে দুবারের বর্তমান সাংসদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানার ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার ওসি মো. হারুন অর রশীদের নিকট জানতে চাইলে তিনি মঙ্গলবার রাতে বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানাটি এখনো থানায় এসে পৌছেনি, পৌছার পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারব।
সিলেট কোতয়ারী থানার ওসি মো. সেলিম মিয়া মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় বলেন, সোমবার আদালত থেকে শাহীনুর পাশা চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় এসেছে।