Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিক্ষার্থীদের দাবি ও রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে এর প্রতিফলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:২৭ PM
আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:২৭ PM

bdmorning Image Preview


আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। তবে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে ইশতেহারের সামাঞ্জস্য না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের (এমডব্লিউইআর)আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ।

সংগঠনটির আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ বলেন,রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কিছু বিষয়ের প্রতিফলন আশা করেছিল মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস (এমডব্লিউইআর)। আমাদের দাবিগুলো ছিল বাংলাদেশের সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একটি নীতিমালার মধ্যে এনে সিলেবাস ও বাজেট প্রদান করতে হবে।

আরিফ আরও বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এখন একশটিরও উপরে হয়ে গেছে। এসব বন্ধ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ানো প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালার কোন প্রতিফলন আমরা ইশতেহারে দেখতে পাইনি। মেধা পাচার রোধ করার জন্য কি কি করা দরকার এ সম্পর্কিত বিষয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ ৫০ বছরে পদার্পণ করবে। আর এই সময়ে বাংলাদেশে ৪ কোটির উপরে ভোটার কর্মহীন। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছর। এই বেকারদের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইশতেহারে নির্দিষ্ট করে কোন কিছু লেখা নেই। কিভাবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে যদি ৪ কোটি মানুষ বেকার থাকে তাহলে আপনি এটাকে কিভাবে উন্নয়ন বলবেন?

তিনি আরও বলেন, আর অনেক দলই বলছেন যুবকদের বেকার ভাতা দেওয়ার কথা। যুবকদের বেকার ভাতা না দিয়ে তাদেরকে কর্মসংস্থান দিতে হবে। একটু জায়গা দিতে হবে যাতে তারা কাজ করে নিজেদের উন্নতি করতে পারে, নিজের মেধাকে সমৃদ্ধ করতে পারে। দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে।

আরিফ বলেন, ক্রীড়া ক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় কয়েকটি ক্রীড়া বাংলাদেশে লক্ষ্যণীয়। আবহমানকাল থেকে যে ক্রীড়াগুলো বাংলাদেশ আছে এর উন্নয়নের জন্য কোন দিক নির্দেশনা নেই ঐক্যফ্রন্ট এবং মহাজোট দুটোর ইশতেহারেই। এ কারণে বিষয়গুলো আমাদেরকে অনেক ভাবিত করছে।

আহ্ববায়ক বলেন, আর স্বাস্থ্য খাতটি ৮০ শতাংশ চলে গেছে বেসরকারি ব্যক্তিদের হাতে। এতে করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় বেড়ে গেছে। অনেকেই অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের কোনো বিষয় আমরা ইস্তেহারে দেখতে পাইনি। স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ সরকারি খরচে বহন করতে হবে।

সংস্কৃতি হলো মানুষের প্রাণ আপনি যখন ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখন আপনাকে শান্ত করার জন্য সংস্কৃতি দরকার। সংস্কৃতির উন্নয়নে কি কি কাজ করা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন কিছুর প্রতিফলন দেখতে পাইনি। দেশীয় সংস্কৃতির উন্নয়নে কি কাজ করবে? আন্তর্জাতিক সংস্কৃতিকে সমন্বয় করে কোনো কাজ করবে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহারে আরো ভালো কিছু দিক তুলে ধরা দরকার ছিল তা নেই। ইশতেহারে না থাকলে কাজ করার সময়ও এটি অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আগামীতে যারা সরকার গঠন করবেন তারা বিষয়টি প্রাধান্য দিবেন বলে আমরা আশা করছি।

শিক্ষা নিয়ে আ.লীগের ইশতেহারে যে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা স্থির করা হয়েছে:

১।শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা পাঠক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা, জ্ঞান আহরণ এবং দেশ ও জাতির অবিকৃত সত্য ইতিহাস জানার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা।

২।শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। ভাষা জ্ঞান ও গণিত জ্ঞানের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ভাষা ও গণিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

৩।বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত করা হবে। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। গত এক দশকে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঝরে পড়ার হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

৪। স্কুল ফিডিং সকল গ্রামে, আধা মফস্বল শহরে এবং শহরের নিম্নবিত্তের স্কুলসমূহে পর্যায়ক্রমে সার্বজনীন করা হবে।

৫।প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে।।

৬।শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের একমাত্র মানদণ্ড হবে মেধা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা।

৭।প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল সর্বতোভাবে বন্ধ করার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

৮।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত ও সহায়তা প্রদান করা হবে। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি করা হবে। সকল জেলায় অন্তত একটি প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।

৯।মাদ্রাসা শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার সাথে কর্মজীবনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য কারিকুলাম যুগোপযোগী করা হবে।

১০। নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় সকল বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আধুনিক শিক্ষা-ব্যবস্থায়ও তাদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে।

১১।সকল দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরের বই ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রতিবন্ধীদেরও মানবসম্পদে পরিণত করা হবে।

১২।শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনও রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষাবিস্তারে যে অঙ্গীকার করা হয়েছেঃ

১।কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে।

২।সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে।

৩।জাতির ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশের পথকে সুগম করার লক্ষ্যে প্রথম বছরেই ডাকসুসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা হবে।

৪।পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে।

৫।প্রকৃত দরিদ্র অস্বচ্ছল মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবে উপযুক্ত হারের বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে এবং এই ক্ষেত্রে অর্থায়নের সাহায্যের জন্য সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিএসআর বাধ্যতামূলকভাবে চালুর ব্যবস্থা করা হবে। (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)

৬।বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করে সরকারিভাবে শিক্ষাব্যয় সুনির্দিষ্টকরে ফি নির্ধারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)

৭।মেধাপাচার রোধে মেধা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি যথার্থ মূল্যায়ন ও উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। ট্যালেন্ট সার্চ কর্পোরেশন গঠনের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)

৮।বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন কৃত্রিম সংকট দূর করে আবাসন সমস্যার সমাধান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলের সংখ্যা (বিশেষ করে মেয়েদের হল) বৃদ্ধি করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ছাত্র রাজনীতির নামে আবাসিক হলগুলোতে সিট বাণিজ্য জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং আবাসিক হলের বরাদ্দ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর খাবারের মানোন্নয়ন ও মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেওয়া হবে। (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)

৯।শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আলাদা আলাদা ভাবে না নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ করে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)

১০।উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষক নির্বাচনে একাডেমিক ফলাফল গবেষণা কর্ম বা পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া নিয়োগ প্রদান করা হবে না। ‌শিক্ষকদের পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নির্ধারণ এ গবেষণা কর্মের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সহশিক্ষা কতার সার্বিক দক্ষতাকে বিবেচনা করা হবে। (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)

১১।‘প্রশ্ন ফাঁস বিরোধী সেল’ গঠন এবং প্রশ্নফাঁস রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন করা হবে। একই সাথে সর্বোচ্চ মহলে জবাবদিহিতা এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত) ১২।বেসরকারি স্কুলগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে।

১৩।ধসে পড়া শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সকল পদক্ষেপ নেয়াহবে।

১৪।সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষন বৃদ্ধি করা হবে।

১৫।প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য নতুন ক্যাডার সার্ভিস চালু করা হবে।

১৬।শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। ১৭।কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহীদের বৃত্তি প্রদান করা হবে।

১৮।মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরী শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান করা হবে। ১৯।প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।

২০।শিক্ষা ক্ষেত্রে জিডিপি’র অনুপাতে বরাদ্দ বর্তমানের ২.২৫ শতাংশের পরিবর্তে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ইউনেস্কো নির্দেশিত ৬ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

Bootstrap Image Preview