Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মৌলভীবাজারে পর্যটকদের ঢল, হোটেল ব্যবসা তুঙ্গে

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:২৯ PM
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৩৯ PM

bdmorning Image Preview


টানা চার দিনের সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের পদবারে মুখর এখন এই চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঢল নেমেছে পর্যটকদের।

পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গল সহ জেলার সব পর্যটন স্পট, হোটেল-মোটেল। হোটেল মালিক ইকরামুল ইসলাম ইমন জানিয়েছেন- হোটেল মোটেলের গুলো সব বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সার্বিক সেবা দিতে প্রস্তুত শ্রীমঙ্গল চৌমোহনায় অবস্থিত তার মালিকানাধীন হোটেল স্কাই-পার্ক।

সাধারণত কোনো ছুটি ছাড়াও পর্যটকদের এমন ঢল নামে এই অঞ্চলে। ঈদ ছাড়া স্বরণকালে এত পর্যটকের ঢল দেখেননি বলে জানিয়েছেন স্কাই-পার্কের ম্যানেজার ওসমান আলী। তিনি জানান- এখন যে পর্যটকরা আসছে তারা বেশিরভাগই সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা।

ঢাকা মতিঝিল শাখার অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার মিয়া মোহাম্মদও এসেছেন স্বপরিবারে, তিনি জানান, ব্যস্ত নাগরিক জীবনে এত লম্বা ছুটি মেলে না। যেহেতু টানা ছুটিতে একটা সুযোগ এল তাই পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সুযোগটা হাত ছাড়া করিনি। চায়ের রজধানী খ্যাত এই নৈস্বর্গিক সুন্দর অঞ্চলটিতে পর্যটকদের এখন উপচে পড়া ভীড়। তীব্র শীত উপেক্ষা করেও যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল থেকে একটু প্রশান্তি পেতে বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা ছুঁটে এসেছেন এই চায়ের রাজ্যে।

পরিবার পরিজন আর বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে অনেকে যে যার মত করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আকাঁবাকা পাহাড়ী পথ ধরে। এক পাশে সারী সারী চা বাগান অন্যপাশে গভীর অরন্যে জানা অজানা হাজারও বৃক্ষের সমাহার। একবার নয় যেন বারবার ফিরে আসতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির এমন শীতল ছায়ায়। তাইতো এবারের ঈদের ছুটিতে প্রাণ ভরে এমন শীতল প্রকৃতির স্পর্শ নিতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছিল শ্রীমঙ্গলের সবগুলো পর্যটন কেন্দ্র।

হঠাৎ করে পাওয়া টানা চার দিনের এই ছুটির সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন ইট-পাথরের বেষ্ঠনিতে থাকা ব্যাস্ত নাগরিকরা। তাই ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে চায়ের রাজধানী খ্যাত এই জেলা। তবে পর্যটকদের ভীড় বেশি দেখা গেছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেইক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বদ্ধভূমি, নীলকণ্ঠ চা কেবিন, চা-বাগানসহ স্থানীয় দর্শনীয় স্থানসমূহে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনামিকা দাস এসেছেন পরিবারের সাথে। তিনি জানান, আমার বাবা-মা উভয়ই সরকারি চাকরি করেন, তাই ইচ্ছে করলেও বেড়ানোর সুযোগটা হয়ে ওঠে না। হঠাৎই এই সুযোগটা পাওয়ায় বাবা-মায়ের সাথে চলে আসলাম।

তিনি আরো জানান, আগেও একবার শ্রীমঙ্গলে এসেছি শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতির প্রতি আমার একটা দুর্বলতা রয়েছে তবে এবার বাবা-মায়ের সাথে আসতে পেরে আরো ভালো লাগছে।

দিনের বেলায় পর্যটন স্পটসমূহ ঘুরে রাতে শহরের বিপণী-বিতানগুলোতে কেনাকেটা করে সময় পার করছেন পর্যটকরা। পর্যটক সমাগম বাড়ার ফলে হোটেল, পর্যটন মোটেল, গেস্ট হাউসসহ আবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে টানা পূর্ণ বুকিংসহ রেস্তোরাঁ এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড খুশি।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বধ্যভূমি ৭১সহ বিভিন্ন চা বাগান এলাকার ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকদের গাড়ি রয়েছে প্রায় শতাধিক। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি লাইন ধরে চা বাগানের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।

শ্রীমঙ্গলের কলেজ রোড এলাকার কয়েকটি হোটেল মালিক ও ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ আগে থেকেই তাদের হোটেলের কক্ষ ফোনে ভাড়া নিয়ে নিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার পর্যটকরা তবে বেশিরভাগই সরকারি চাকুরে স্বপরিবারেই এসেছেন।

হোটেল স্কাই পার্কের ম্যানেজার সাগর কর বিডিমর্নিংকে জানান, টানা চার দিনের ছুটির কারনে অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকদের সংখ্যা বেশী। ইতোমধ্যে দুই দিন শ্রীমঙ্গলে থেকে অনেকে পর্যটক সিলেটের দিকে বেড়াতে যাচ্ছে আবার নতুনরা অনবরত শ্রীমঙ্গলে আসছেন।

শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী খাবার হোটেল পানসি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মোহাম্মদ হোসাইন বিডিমর্নিংকে জানান, টানা চারদিনের সরকারি ছুটি থাকায় প্রচুর পর্যটক তাদের রেস্টুরেন্টে আসছে,তিনি জানান তিল ধারণের জায়গা থাকছেনা হোটেলে। এমনকি অনেক কাস্টমার দাঁড়িয়ে থেকে পরিবার নিয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। হোসেন আরো জানায় আমরা বাধ্য হয়ে বাবুর্চি এবং স্টাফের সংখ্যা বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

শহর ও আশপাশের সকল আবাসিক হোটেলগুলো অনেক আগেই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। চলতি সপ্তায় শহরের অনেক হোটেল পূর্ণ বুকিং হয়ে আছে। ভ্রমণ পিপাসুরা সমান তালে মাধবপুর লেইক, শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমি, মাধবকুণ্ড ও হাম হাম জলপ্রপাতেও, হাকালুকি বেড়াতে যাচ্ছেন।

এ দিকে আগের সময়ের চেয়েও পর্যটক সেবার প্রতি বাড়তি নজর দিচ্ছে প্রশাসন। সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন এলাকায়সমূহে টহলে রয়েছেন।

মৌলভীবারের পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল বিডিমর্নিংকে জানিয়েছেন, টানা ছুটিতে পর্যটকরা আসবে তা আমরা আগেই ধারনা করেছি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটন স্পটসমূহে নিয়মের চেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। টুরিষ্ট পুলিশের সাথে সমন্নয় করে সমস্ত জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট সমুহের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে পুলিশ।

Bootstrap Image Preview