Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কমলগঞ্জে চা শ্রমিকদের মাঝে ভোটের হাওয়া

রাজকুমার সেন, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:১২ PM
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:১২ PM

bdmorning Image Preview


আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মৌলভীবাজার জেলার প্রতিটি চা বাগান এলাকায় চা শ্রমিকদের মধ্যে  আমেজ তৈরি হয়েছে। সব কোলাহল ছাপিয়ে বাতাসে ভাসছে মাইকের আওয়াজ। সর্বত্রই এখন ভোটের স্লোগান।

সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কালীঘাট রাজঘাট চা-বাগানে গিয়ে দেখা যায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চা বাগান এলাকাজুড়ে যেন উৎসবের সমারোহ। চা বাগানে অবস্থিত দোকান ঘর, মাটির ঘর, বিদ্যালয় ও গাছের গায়ে সাঁটানো প্রার্থীদের হাজার হাজার পোস্টারই বলে দেয় নির্বাচন আসন্ন।

শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনে চা-বাগান আছে প্রায় ৬০টির মতো। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে এখন চা-বাগানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, চা-শ্রমিক ভোটারদের ঘরে ঘরে সব প্রার্থীর প্রতিযোগিতামূলক আনাগোনায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন ৷ এই ভোটারদের মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক চা-শ্রমিক ভোটার রয়েছেন আর প্রকৃত পক্ষে এই চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীই মূলত এই আসনের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেন এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।

কালীঘাট এলাকায় সুমিত বাড়ৈ এর চায়ের দোকানে দশ-পনের জন পুরুষ চা শ্রমিক বসে নির্বাচন নিয়ে আলাপ করছে।এই পনের জনের গ্রুপে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে রয়েছে নতুন ভোটার তাদের মধ্যে একজন দুলাল বাড়ৈ তিনি বলেন, চা-শ্রমিকরা আগের মতো পিছিয়ে নেই। গত দশ বছরে চা-বাগানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে বেশীর ভাগ চা-বাগান। তাই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে বর্তমান সরকারকেই ক্ষমতায় দেখতে চান তারা।

তবে উপস্থিত রাজন হাজরা নামে একজন নতুন ভোটার তিনি জানান, আমি বেশ উৎফুল্ল এই প্রথম ভোট দিবো। তবে আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকেই আমার প্রথম ভোটটি দিতে চাই।

মাখন লাল বাড়ৈ বলেন, ভোট আসছে ভোট আমরা দিমু কিন্তু সরকার যেন আমাদের ভূমির মালিকানা দেয় এটাই আমাদের দাবি।

এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন ১৯৯১ সাল থেকে টানা পাঁচবারের নির্বাচিত সাংসদ উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী মুজিবুর রহমান, উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে গণফোরামের প্রার্থী হয়েছেন শান্তিপদ ঘোষ। আর হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রচারণা করছেন ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা সালাউদ্দিন।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, নির্বাচনে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যেই মূল লড়াইটি সীমাবদ্ধ থাকবে।

রাজঘাট চা বাগান এলাকায়ও চলছে প্রার্থীদের তুমুল প্রচার প্রচারণা। এছাড়াও ভুড়ভুড়িয়া চাবাগান ফুলছড়া, সাতগাঁও, মির্জাপুর চা-বাগানেও প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

রাজঘাট চা-বাগানের ভেতর ঢুকেই চোখ পড়ে দুর্গা মন্দির। বয়ষ্ক চা শ্রমিক মৃদুল রিকিয়াসন কথা বলছিলেন নির্বাচন নিয়ে। তিনি জানালেন, স্বাধীনতার পর থেকেই ভোট দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমাদের জীবনমানের কোন উন্নয়ন হয়নি। এবার যে প্রার্থী আমাদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিবে তাকেই এবার ভোট দিবো।

প্রচলিত ধারণা, চা শ্রমিকরা বংশপরম্পরায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির পক্ষেই ভোট দিয়ে থাকে। এ কারণেই প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীরা এই শ্রমিকদের মন জয় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন

 

 

Bootstrap Image Preview