Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘অন্তু হত্যার’ বিচার না হলে গণআন্দোলনের হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৩৪ PM
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:০০ PM

bdmorning Image Preview


কিশোরগঞ্জে চিরকুট লিখে মাস্টার্স ফলপ্রত্যাশী তরুণী ফৌজিয়া খানম অন্তুর (২৩) আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারীর সুষ্ঠু বিচার না হলে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে এলাকাবাসী ও সর্বস্তরের জনগণ।

এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টার দিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে শহরের কালীবাড়ির মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র ও সামাজিক সংগঠন।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণ।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক বলেন, অন্তু সহকারী জজ(গাইবান্ধা) সুমন মিয়ার প্ররোচনায় আত্মহত্যা করেছে(চিরকুটে উল্লেখিত)। কিন্তু অন্তু বেঁচে থাকলে জজ হতে পারতো। সে অর্নাসের প্রতি ইয়ারে ফার্স্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সে আত্নহত্যার পথ বেঁছে নেয়। অন্তুকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।

এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করার জন্য কিশোরগঞ্জের সকল স্তরের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা লীগের যুগ্ন-আহবায়ক বিলকিস বেগম।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, হত্যার প্ররোচনাকারী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতাই আনুন। আমরা তার পরিচয় দেখতে চাই না। অপরাধীর বিচার দেখতে চাই।

প্রসাশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাত ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আফাকুল ইসলাম নাটু বলেন, এই আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীকে অতিসত্ত্বর বিচারের আওতাই এনে বিচার করুন। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এইভাবে প্রতারণা করতে না পারে।

অতিবিলম্বে মামলা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল গনি ঢালী লিমন বলেন, অন্তু আত্মহত্যা করেনি। তাকে প্ররোচনা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী বলে, অন্তু প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আমরা এটাকে আত্মহত্যা বলবো না, এটা একটা হত্যাকাণ্ড। আমরা এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

সুষ্ঠু বিচার না হলে কিশোরগঞ্জের সকল স্তরের মানুষের নিয়ে গনআন্দোলন গড়ে তুলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এ ছাত্র নেতা।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, অন্তু আত্মহত্যার প্রধান প্ররোচনাকারী গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী জজ সুমন মিয়া। এই কারণে থানায় মামলা করতে গেলেও থানায় মামলা নেয়নি।

বক্তারা আরও বলেন, অতিবিলম্বে মামলা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করুন। সুষ্ঠু বিচারের জন্য যদি আমাদের ঢাকায় লং মার্চ করতে হয় প্রয়োজনে তাই করবো। ‘অন্তু হত্যার’ সুষ্ঠ বিচার না হলে কিশোরগঞ্জের গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতিয়া হোসেন, মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হামিদা বেগম, জেলা উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ফাতেমা তুজ জহুরাসহ নারী নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম ও শাহজাহান কবীর হিমেল, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির শিবলি, দপ্তর সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়নসহ সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

এদিকে অন্তুর আত্মহত্যার ঘটনায় চিরকুটে উল্লেখিত সহকারী জজ সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ জানানো হলেও মামলা নিতে পুলিশ ‘গড়িমসি’ করছে বলে অভিযোগ করেছে তরুণীর পরিবার।

গত শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের রাকুয়াইল এলাকার নিজ বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন অন্তু। আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইড নোটে নিজেই নিজের মৃত্যুর কারন লিখে যান তিনি।

সেখানে তিনি তার আত্মহত্যার জন্য দায়ী করেন ময়মনসিংহ ত্রিশাল উপজেরার বৈলর ইউনিয়নের সম্মুখ বৈলর গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে সহকারী জজ সুমন মিয়া (গাইবান্ধা)কে। তার সুইসাইড নোট অনুযায়ী দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক এবং বর্তমানে তার প্রতি অনিহা থেকেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন। মৃত্যুর আগে সুইসাইড নোটে তিনি সুমন মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবী করে গিয়েছেন।

অভিযুক্ত যুবক সুমন মিয়া

ফৌজিয়া খানম অন্তু কুয়েতপ্রবাসী ফরিদ উদ্দিন খান এর মেয়ে। তিনি সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে অনার্স পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিন বোন ও এক ভাই এর মধ্যে ফৌজিয়া সুলতানা অন্তু সবার বড়।

স্বজনরা জানান, শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মা সুলতানা খানম ছোট দুই মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে শহরের গাইটাল এলাকার অতিথি কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অনেকবার বলেও সেখানে বড় মেয়ে অন্তুকে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে পারেননি। মেয়ের কথামতোই বাইরে থেকে বাসায় তালা দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তাঁরা।

এলাকায় দারুণ মেধাবী মেয়ে হিসেবে পরিচিত ফৌজিয়া খানম অন্তু এভাবে আত্মহননের পথ বেছে নেয়ায় সবাই হতবাক।

চিরকুটে লেখা ছিল, “আমার মৃত্যুর জন্য সহকারী জজ সুমন মিয়া (গাইবান্ধা) দায়ী। সে আমার সব কিছু জেনেও আমাকে স্বপ্ন দেখাইছে। আমার সাথে অনেক দূর পর্যন্ত আসছে। এখন আমি তার যোগ্য না খারাপ মেয়ে বলে ছেড়ে দিল। বাট এখন আর....। খাইরুল ইসলাম (ভূগোল পরিবেশ) মাস্টার্স আমার ক্লাস মেট তার সাথে আমার এক সময় একটা এফেয়ার ছিল। আমি তাকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের ইমেজ নষ্ট করলাম। তাকে সব সময় হেল্প করেছি। আর সে আমার নামে এতো খারাপ খারাপ কথা ছড়ালো। আর খাইরুল চিনে এই ছেলেকে। সে আমার নামে অনেক মিথ্যা কথা বলেছে। কোন দিন তার সাথে এফেয়ার ছিল না। তারপরও এমন কথা বলছে, যা মুখে বলাও পাপ। আমার আম্মা তোমারে অনেক জ্বালিয়েছি ছোটবেলা থেকে। তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা কর। অন্তু”

চিরকুটের নিচে আরো লেখা ছিল, 'আমার লাশটি কাটাছিঁড়া করতে দিও না।'

এছাড়া চিরকুটের আরেক পৃষ্ঠায় লেখা ছিল, “আম্মা কোনদিন এদের ছেড়ে দিও না। দাদার কাছে গিয়ে হলেও এর বিচার যেন হয়। তোমার কাছে এই অনুরোধ।”

Bootstrap Image Preview