ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার মামলায় তার শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকতারা বলেছেন, বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিনাত আখতারকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে যদি তারা আজকের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্থন না করেন। ঘটনার পরপরই সাময়িক বরখাস্ত এবং আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিনাত আখতার ও শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনা কে পূর্ণাঙ্গ বরখাস্ত করা হয়। আজই প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, স্কুলের নিয়মিত পরীক্ষা শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে এবং কলেজ শাখার ক্লাস রোববার (৯ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হবে বলে গভর্নিং বডির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারী সুলতানা জানিয়েছেন, বডির সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যোগ্যতার বিবেচনায় আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে।
এদিকে, যে গভর্নিং বডির অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে সেই বডির সদস্যদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনরত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা গভর্নিং বডির অপসারণসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার (০৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ফের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তাদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন তাদের অভিভাবকরাও।
ছয়দফা দাবি হলো- অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকদের পদত্যাগের লিখিত আদেশ জনসম্মুখে দেখাতে হবে এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ভিকারুননিসা স্কুলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, কথায় কথায় বহিষ্কারের ভয় দেখানো যাবে না এবং অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির জন্য ডিটেনশন পলিসি চালু করতে হবে, মানসিক সুস্থতার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানসিক চিকিৎসক দিয়ে কাউন্সিলিং করতে হবে, গভর্নিং বডির সবাইকে অপসারণ করতে হবে, ঘটনার জন্য অরিত্রীর বাবা-মায়ের কাছে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, গত রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে—এমন অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাঁদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেওয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে দিলীপ অধিকারীর দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।