Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কারণে নির্বাচনী মাঠে নেই বিএনপির হেভিওয়েটরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:২১ AM
আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:১৬ PM

bdmorning Image Preview


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মামলার কারণে কেউ অংশ না নিতে পারলে কোনো আসনে যেন দলের প্রার্থী শূন্য না থাকে, সে জন্য প্রতিটি আসনে বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। কিন্তু বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া নেতারা বলছেন-এভাবে ঢালাও মনোনয়ন দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করা হয়েছে।

একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলেও মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন অনেক পোড় খাওয়া নেতা। অনেকে মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন করছেন না। এ নিয়ে দলটিতে চলছে নানা গুঞ্জন।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্তত তিন সদস্য এবার ভোট করছেন না। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যেও কেউ কেউ নির্বাচন করছেন না। ভোটে না থাকার তালিকায় রয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারাও। বাদ নেই যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতারাও।

যে কারণে ভোটে নেই তারা

রিজভী

রুহুল কবির রিজভীর রয়েছে শক্ত রাজনৈতিক পটভূমি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। '৯০-এর গণআন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি।

রুহুল কবির রিজভী বহুদিন ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি এর আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন। পরে যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

দলের সংকটময় মুহূর্তে রিজভী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের বার্তা সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে পৌঁছে দেন। মাসখানেক টানা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার থাকার ইতিহাসও রয়েছে।

রিজভী কুড়িগ্রাম কিংবা রাজশাহীর একটি আসন থেকে নির্বাচন করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে নেই। মনোনয়নপত্রই সংগ্রহ করেননি।

নির্বাচন না করার বিষয়ে রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে এবং তারেক রহমানকে নির্বাসিত রেখে তিনি নির্বাচন করবেন না। এ ছাড়া বর্তমান ‘একনায়কতান্ত্রিক’ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে লড়াই করছে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন তিনি করবেন না।

সালাহউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার থেকে নির্বাচন করেন। তার আসনে স্ত্রী হাসিনা আহমেদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় ভারতের আদালতে খালাস পেলেও তিনি এখনও দেশে ফিরতে পারেননি। এ কারণে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।

মাহবুবুর রহমান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমানও নির্বাচন করছেন না। তিনি দিনাজপুর-২ আসন থেকে দুবার দলের মনোনয়ন পান। একবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়; তাই নির্বাচন করছি না।

নজরুল ইসলাম খান

স্থায়ী কমিটির এই নেতার নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তবু শোনা যাচ্ছিল স্বাভাবিক নির্বাচন হলে তিনি এবার জামালপুরের একটি আসনে নির্বাচন করতে পারেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠল না। তিনি বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

আবদুল আউয়াল মিন্টু

নির্বাচন না করা প্রসঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমার কখনই নির্বাচন করার শখ ছিল না। পরিবারের মধ্যে আমার বাবা-ভাই নির্বাচন করেছেন। অতীতে আমি কখনও নির্বাচনে অংশ নিইনি। এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা গ্রেফতার-মামলা ও হয়রানির মুখে পড়ছেন প্রতিনিয়ত।

এ রকম অবস্থায় আমি মনে করছি-নির্বাচনে অংশগ্রহণের চেয়ে নির্বাচন পরিচালনায় আমার সময় ও অবদান রাখা উচিত। সে জন্য দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমি নির্বাচন না করে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কারণ নির্বাচন পরিচালনায় দলে এখন পর্যাপ্ত ও অভিজ্ঞ লোকজনের অভাব রয়েছে। সে জন্য আমি মনে করছি-দলের এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নির্বাচন করার চেয়ে নির্বাচনী কাজে সময় ও শ্রম দেয়া জরুরি। তিনি বলেন, দলও মনে করে যে নির্বাচন পরিচালনার কাজে আমি সম্পৃক্ত থাকি। আমার মনোনয়নপত্র দাখিল নিয়ে যেসব খবর গণমাধ্যমে আসছে তা সঠিক নয়। এ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল।

অধ্যাপক এমএ মান্নান

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ মান্নান চেয়েছিলেন গাজীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে।

গত সিটি নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত মান্নানকে সংসদ নির্বাচনও মূল্যায়ন করা হয়নি। তবে তার ছেলে মঞ্জুরুল আলম রনিকে যৌথভাবে ওই আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

আলাল

যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের রাজনৈতিক হাতেখড়ি ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে। পরে তিনি যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে প্রায় এক দশক সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। টিভিতে টকশোয় দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। গত এক দশকে তার বিরুদ্ধে অন্তত ‌১০০ মামলা হয়েছে। বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তবু হাল ছাড়েননি।

আলাল ২০০৮ সালে মোহাম্মদপুর-আদাবর আসন থেকে নির্বাচন করেন। এবার বরিশাল-৫ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বরিশাল-২ আসন থেকে। তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

বরিশাল-২ আসনে এবার আলালের পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সরফুদ্দিন সান্টুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আর আলালের কাঙ্ক্ষিত আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার।

অনেকে বলছেন, বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সরোয়ার। ওই আসনে মনোনয়ন দৌড়ে সরোয়ারের কাছে হেরে যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারছেন না আলাল। তাই হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে ভোট থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন।

তবে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচন করতে পারছেন না। তাদের একজন কারাবন্দি, অন্যজন নির্বাসিত। এমতাবস্থায় জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে তিনি নির্বাচন করতে পারেন না।

সোহেল ২০০৮ সালে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এবারও ওই আসন থেকেই তার পক্ষ হয়ে মেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড তাকে অন্য আসন দিতে চেয়েছিল। তাই তিনি নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সোহেল কারাবন্দি থাকায় এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে সোহেলের মেয়ে জান্নাতুল ইলমি সূচনা এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে।

সেখানে তার বাবার মনোনয়ন সম্পর্কে ইলমি লেখেন- ‘এমন না যে তাকে আসন দেয়া হয়নি। একাধিক আসনের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু আমাদের দাবিতে আপসহীন ছিলাম। যোগ্যতার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’

Bootstrap Image Preview