ঢাকার তুরাগ থানা এলাকার চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হত্যাকারীকে।
শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর আদাবরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মনির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন রাত সাড়ে ১১ টায় শনিরআখড়া এলাকা থেকে অপর আসামী ফরিদকে গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেন মহানগর পুলিশের ডিসি মাসুদুর রহমান।
এ সময় তাদের হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র- ধারালো বটি ও রড উদ্ধার করা হয়।
গত ২০ অক্টোবর রাতে তুরাগ থানাধীন উত্তরার ১৬ নং সেক্টরের ২ নং প্লটে কাশবনে ঘেরা স্থান থেকে দুইটি অজ্ঞাত ব্যক্তিগর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে তুরাগ থানার পুলিশ। দুটি লাশেরই চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় তাদের শনাক্তকরণে জটিলতার মধ্যে পড়ে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরদিন লাশ দুটি শনাক্ত করেন তাদের স্বজনেরা।
এ ঘটনায় নিহত কামাল হোসেনের পিতা শেখ জলিল বাদী হয়ে তুরাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তুরাগ থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ।
যে কারণে হত্যা:
মামলার তদন্ত এবং আসামিদ্বয়ের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, ভিকটিম কামাল হোসেন ও ইমন শেখ এবং আসামি মনির হোসেন ও ফরিদ একই ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। তারা তাদের ডাকাত দলের অন্য সদস্য রেজাউল, আল-আমিনসহ তুরাগ থানাধীন বেড়িবাঁধ, উত্তরা সেক্টর এলাকা ও ফরিদপুরসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় কখনো পাকা রাস্তা, কখনো কাঁচা রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করতেন।
দিনের বেলা তারা কখনো রংমিস্ত্রি, কখনো গাড়ির ড্রাইভার-হেল্পার হিসেবে কাজ করতেন। গভীর রাতে প্রথমে তারা রোড ডিভাইডারের খণ্ড, বড় পাথর ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাস্তায় চলাচলকারী প্রাইভেটকার, সিএনজি ইত্যাদির পথরোধ করতেন। তারপর ধারালো দা, বটি, লোহার রড ইত্যাদি বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে যাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার লুটে নিতেন।
কাজ শেষে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগী করে নিতেন লুণ্ঠিত মালামাল। এই ভাগাভাগী থেকেই সৃষ্টি হয় কোন্দল। বিভিন্ন সময় কামাল ও ইমন লুণ্ঠিত মালামালের অধিকাংশ নিয়ে নেওয়ায় বাকিদের মধ্যে এ নিয়ে সৃষ্টি হয় অসন্তোষ।
সর্বশেষ ফরিদপুরে একটি ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। তখন প্রতিশোধ নিতে গ্রেফতারকৃত ফরিদ ও মনির হোসেন ভিকটিম কামাল ও ইমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
যেভাবে হত্যা:
গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় যথারীতি কামাল হোসেন, ইমন শেখসহ আসামি মোঃ মনির হোসেন, মোঃ ফরিদ ও রেজাউল নামে ডাকাতদলের অন্য এক সদস্যসহ ডাকাতির উদ্দেশ্যে মিলিত হন উত্তরার ১৬ নং সেক্টরে। রাত ৯টার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রওনা হবার পর ১৬ নং সেক্টরের ২ নং প্লটে কাশবনের ভেতর দিয়ে যাবার সময় এক পর্যায়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মনির ও ফরিদ সঙ্গে থাকা ধারালো বটি ও লোহার রড দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকের কামাল ও ইমনকে।
এ সময় ভয় পেয়ে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যান রেজাউল। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট উপুর্যপরি আঘাতের পর দুজনকেই মৃত ধারণা করে লাশগুলো ফেলে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যান আসামিরা। পালানোর সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো বটি ও রড রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর ফেলে দেন তারা