ঝগড়া হলে প্রায়ই তরুণীকে অ্যাসিড ছোঁড়ার হুমকি দিতেন স্বামী। তরুণী ভেবেছিলেন, বিবাহবিচ্ছেদ করলে এ থেকে মুক্তি মিলবে। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। বিবাহবিচ্ছেদ করলেন, কিন্তু রেহাই পেলেন না অ্যাসিড থেকে। দিনের বেলা প্রকাশ্যেই ওই তরুণীকে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ উঠল তার সেই প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে আনন্দপুরের মার্টিনপাড়া গুলশন কলোনিতে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় এক গণমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার সকালে ঘটনার পর পরই আনন্দপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ওই যুবক বারবার হুমকি দেওয়ায় যন্ত্রণায় কাতরালেও হাসপাতালে ভর্তি হতে ভয় পাচ্ছেন ওই তরুণী।
অভিযুক্ত ওই যুবকের নাম জানে আলম খান। ৩০ বছরের ওই তরুণীর অভিযোগ, গত শনিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ জানে আলমের সঙ্গে তার দেখা হয়। এ সময় তাদের দুজনের মধ্যে শুরু হয় বাদানুবাদ। পরে তার বর্তমান স্বামী এসে তাকে সেখানে থেকে নিয়ে যান।
যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ওই তরুণী বলেন, ‘আমি একা ঘরে থাকলে ক্ষতি হতে পারে, এই ভেবে আমার স্বামী আমাকে তপসিয়া রোডে বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেবেন ঠিক করেন। বাড়ি থেকে বেরোতেই হঠাৎ আমার দিকে অ্যাসিড ছোড়ে জানে আলম।’
তিনি জানান, মুহূর্তের মধ্যে তার গোটা শরীর পুড়ে যাওয়ার মতো জ্বলতে থাকে। রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকেন তিনি। তার এই অবস্থা দেখে তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তার বর্তমান স্বামী। সেই সুযোগে পালিয়ে যায় জানে আলম।
মঙ্গলবার তপসিয়ায় তরুণীর বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাসিডে মুখ, হাত, গলা, পিঠ ঝলসে গিয়েছে ওই তরুণীর। কোনোক্রমে বেঁচে গেছে তার দুটি চোখ। শনিবারই তাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন তার স্বামী। কিন্তু যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় ফের তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, জানে আলমের পরপর হুমকির জেরে ত্রস্ত তারা। হাসপাতালে ভর্তি হলে ওয়ার্ডে ঢুকে সে ফের হামলা চালাতে পারে, এই ভয়েই সেখানে ভর্তি হতে চাইছেন না ওই তরুণী।
তরুণীর ভাই বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে একটা নম্বর থেকে ফোন আসে। এক ব্যক্তি নিজেকে জানে আলম পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, দিদিকে ফিরে না পেলে আমার অন্য বোনেদের উপরেও অ্যাসিড হামলা চালাবে।’ পরে ওই নম্বরে ফোন করলে সেটি বন্ধ ছিল বলে তার দাবি।
ওই তরুণীর বক্তব্য, ‘বিয়ের ১৭ বছর পরে ঘর ছেড়েছি। দুটো মেয়েকেও জানে আলম নিয়ে গিয়েছে। তবু আমার নিস্তার মিলছে না।’
পুলিশের কাছে তরুণীর মায়ের কাতর আর্তি, অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। তারা আতঙ্কে রয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। কিছু সূত্র মিলেছে। দ্রুত অভিযুক্ত ধরা পড়ে যাবে।