চীনের প্রান্তিক সমাজের প্রতিদিনের বাস্তবতা ফুটে উঠেছে লু গুয়াংয়ের আলোকচিত্রে। বিশেষ করে কয়লা খনির শ্রমিক, মাদকাসক্ত ও এইচআইভি রোগীদের কথাগুলো ছবিতে তুলে ধরেছেন এই ফটোগ্রাফার।
কিন্তু পুরস্কারজয়ী এই আলোকচিত্রী এখন নিজের কঠোর বাস্তবতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। অজ্ঞাত কারণে সপ্তাহ তিনেক আগে চীনের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে। লু গুয়াংয়ের স্ত্রী জু শিয়াওলির বরাতে এবিসি নিউজ এ খবর দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা লু গুয়াং গতমাসে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ পেয়ে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে গিয়েছিলেন।
জু শিয়াওলি বলেন, গত ৩ নভেম্বর জিনজিয়াংয়ে গিয়েছিলেন লু গুয়াং। এর পর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। গত ৫ নভেম্বর এক বন্ধুর সঙ্গে লুর দেখা করার কথা ছিল।
চীনা সরকার ক্ষুব্ধ হতে পারে এমন কোনো কাজ তার স্বামী করেছেন কিনা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলেও জানান জু। তিনবার ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার বিজয়ী লু চীনের পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে কাজ করছেন।
বিবিসি জানায়, আলোকচিত্র বিষয়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৩ অক্টোবর লু জিনজিয়াং প্রদেশের রাজধানী উরুমকিতে যান।
সেখান থেকে চেন নামে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে তার সিচুয়ান প্রদেশে যাওয়ার কথা ছিল। সিচুয়ানে একটি দাতব্য অনুষ্ঠানেও যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল লুর।
কিন্তু চেন সিচুয়ান গিয়ে লুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন এবং নিউ ইয়র্কে জুর সঙ্গে যোগাযোগ করে লু সম্পর্কে জানতে চান।
জু জানান, তিনি নিজেও লু কোথায় আছে জানেন না। সর্বশেষ ৩ নভেম্বর তিনি স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
যে ব্যক্তি লুকে চীনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জু তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন লু এবং তাকে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে দুজনকেই জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে।
পরে ঝেজিয়াং প্রদেশে লুর শহরের এক কর্মকর্তা তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জুকে নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে তিনি আর কোনো তথ্য দেননি বলে জানান জু।
পরে টুইটারে এক পোস্টে জু লেখেন, সে ২০ দিনের বেশি সময় ধরে সে নিখোঁজ আছে এবং তার পরিবারের সবচেয়ে কাছের সদস্য হিসেবে তাকে গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য আমাকে জানানো হয়নি। আমি বারবার জিনজিয়াং প্রদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছি।
তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ের ২০ বছর পূর্ণ হবে। আমরা একসঙ্গে তা উদযাপন করতে চাই। এখন আমি শুধু তার নিরাপদে বাড়ি ফেরার আশা করতে পারি।
‘সামাজিক দায়িত্বের ব্যাপারে লুর ব্যাপক মানসিক বোধ কাজ করে। তিনি মনে করেন, বঞ্চনার শিকার হওয়ার পর সেখানে কিছু বিষয় থাকে, যা মানুষের জানা উচিত। তার ধারনা, তার কাজ অন্যকে সাহায্য করতে মানুষকে উৎসাহিত করবে এবং কোনো কিছুর পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।
চীনের সর্বপশ্চিমের প্রদেশগুলোর একটি জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলমান সম্প্রদায়ের বাস। যে কারণে সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও অনেক বেশি।