মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সংযোগ খতিয়ে দেখবে ডেমোক্র্যাটরা। সেই সঙ্গে তদন্ত করবে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়াও। এ তদন্তে নেতৃত্ব দেবে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা কমিটি।
যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরবের সম্পর্কের ‘নাড়িনক্ষত্র’ গভীরভাবে খতিয়ে দেখার অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারিতেই শুরু হবে এ তদন্ত প্রক্রিয়া। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন গোয়েন্দা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট সদস্য অ্যাডাম স্কিফ।
ওয়াশিংটন পোস্ট শনিবার এ খবর জানিয়েছে। খাসোগি হত্যাকাণ্ডের জেরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে সৌদি আরব যখন কোণঠাসা তখন ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ট্রাম্প। হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সরাসরি নির্দেশ থাকলেও তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছেন তিনি।
খাসোগি হত্যায় গাদাগাদা তথ্য-প্রমাণ এমনকি সিআইএ’র মূল্যায়ন উপেক্ষা করে রাজপরিবারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
নিজের এই অবস্থানের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি বারবার সৌদির সঙ্গে স্বাক্ষরিত অস্ত্র চুক্তি ও ইরান প্রশ্নে ওয়াশিংটনের কৌশলগত অবস্থানের কথা বলছেন। ট্রাম্পের কাছে ‘খাসোগির চেয়ে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
চলতি সপ্তাহেই ট্রাম্প বলেন, ‘খাসোগি হত্যায় যুবরাজ জড়িত থাকলেও রিয়াদ-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের স্বার্থে সৌদিকে প্রয়োজন। সৌদি ছাড়া ইসরাইল টিকে থাকতে পারবে না।’
প্রেসিডেন্টের এই ‘নির্লজ্জ’ অবস্থানের সমালোচনা করেছেন ডেমোক্রেটিক দলের কংগ্রেস সদস্য তুলসী গ্যাবার্ড। শনিবার এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্পকে ‘সৌদি আরবের পোষা মাদি কুকুর’ বলে অভিহিত করেন তিনি। সৌদি শাসক পরিবারের প্রতি ট্রাম্পের নগ্ন সমর্থনের ব্যাপারে ওয়াশিংটন পোস্টকে অ্যাডাম স্কিফ বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাণিজ্য সম্পর্ক মার্কিন নীতিকে প্রভাবিত করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
তিনি বলেন, কমিটি ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসনে মার্কিন সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি খাসোগি হত্যায় ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ার গোয়েন্দা মূল্যায়ন করবে। একইসঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের ‘খুঁটির জোর’, সমালোচক ও বিরোধী মত এবং সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের আচরণও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য অ্যাডাম স্কিফ। চলতি মাসের কংগ্রেসের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর আগামী জানুয়ারিতে কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার কথা রয়েছে তার।
এর মাধ্যমে ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের ওপর নজরদারি চালাতে পারবেন ডেমোক্র্যাটরা। পাঠাতে পারবেন সমন বা স্থগিত করতে পারবেন শুনানি। স্কিফ বলেন, ‘নিশ্চিয়ই আমরা খাসোগি হত্যাকাণ্ডে আরও তদন্ত করব। আমরা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করে দেখতে চাই, এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কতটুকু জানে।’
সম্প্রতি সরাসরি সৌদি যুবরাজের নির্দেশে খাসোগি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সিআইএ’র এমন মূল্যায়ন উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। অ্যাডাম স্কিফ বলেন, তার প্যানেল সিআইএ’র অনুসন্ধান পরীক্ষা করে দেখবে।
এছাড়া সৌদি আরবের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আর্থিক সম্পর্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রতিক্রিয়ায় ভূমিকা রেখেছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখবেন তারা।