Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

একের পর এক কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:১৮ PM
আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২৩ PM

bdmorning Image Preview


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামেও ডাকেন অনেকে। মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। তবে ইদানীং এর পরিমাণটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তার চেয়ে বড় কথা চলতি বছরের ১১ মাসে আত্মহত্যা করেছেন ৯ শিক্ষার্থী। শুধু গত ১২ থেকে ১৬ই নভেম্বরের মধ্যেই আত্মহত্যা করেছেন ৩ শিক্ষার্থী।

প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার্থীরা কেন আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন? শিক্ষার্থীদের এমন আত্মহননে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ দিকে আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরকে আরো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়াও হল ও বিভাগসমূহেও হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়তি নজর দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়’- শীর্ষক সেমিনার।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সর্বশেষ গত ১৬ই নভেম্বর শুক্রবার যশোরের গ্রামের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন ঢাবি’র ২০১০-১১ সেশনের প্রাক্তন ছাত্রী মেহের নিগার দানি। এখনো পর্যন্ত তার আত্মহত্যার কারণ জানা যায়নি। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধুদের এড়িয়ে চলতেন বলে জানা গেছে। বন্ধুদের ভাষ্যমতে তিনি বেশ কিছুদিন ধরে একা ও বিষণ্নতার মধ্যে থাকতেন।

এর আগে প্রেমঘটিত কারণে ১৪ই নভেম্বর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ঢাবি অধিভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থবর্ষের ছাত্রী লায়লা আঞ্জুমান ইভা।

এই ঘটনার দুইদিন আগে আবারো প্রেমের সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে চলতি মাসের ১২ তারিখ রাজধানীর ফার্মগেটে একটি হোস্টেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী ফাহমিদা রেজা সিলভি।

এর আগে গত ১৫ই অক্টোবর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র জাকির হোসেন। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন বলে ধারণা জাকিরের বন্ধুদের।

১০ই সেপ্টেম্বরে রাজধানীর রামপুরায় নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেন আফিয়া সারিকা নামের এক ছাত্রী। যিনি মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। নিহতের পরিবারের ধারণা, প্রেম সংক্রান্ত কোনো কারণে সারিকা গলায় ফাঁস দিয়েছে।

এর আগে ১৫ই আগস্ট রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আত্মহত্যা করেন সংগীত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিক মাহবুব। আত্মহত্যার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি দেশের শিক্ষা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

চলতি বছরের শুরুতে ১৪ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগের নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন স্যার এএফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ফিন্যান্স বিভাগের তরুণ হোসেন।

ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের এ পথ থেকে ফিরে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমরা অলরেডি একটি সেমিনার করেছি। এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষণ্নতা যখন চেপে ধরে তখন মানুষ মুক্তি চায়। কিন্তু মুক্তি পেতে গিয়ে তারা যে জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তা বোঝে না। এ ছাড়া প্রেমঘটিত কারণ, পারিবারিক অভাব অনটন, বেকারত্ব, একাডেমিক চাপসহ বিভিন্ন বিষণ্নতার কারণে আত্মহননের মতো জঘন্য পথ বেছে নিয়েছেন তারা।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানসিক চাপ, হতাশা, অবসাদ ও হেনস্তার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আবার আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও পারিবারিক সংকটের কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করে।

Bootstrap Image Preview