Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নাইম হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিল ছাত্রলীগ নেতা

তাজুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৯ PM
আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: বিডিমর্নিং


তাজুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে এসে ঘাতক বন্ধু বিশু হাতে খুন হন নাঈম ইসলাম (২০)। নাঈম গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ী (মড়িয়া) গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ইন্তেজার রহমানের পুত্র ও বগুড়া বেসরকারি বিট পলিটেকনিকের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

মোটরসাইকেল লোপাট করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ই অক্টোবর তাকে নির্মমভাবে খুন করে সারিয়াকান্দি শহর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনন্ত শ্রাবন বিশু। ১৯ নভেম্বর ১৬৪ ধারায় আদালতে তা জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক বিশু।

বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) রাতে সারিয়াকান্দি থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিশুর স্বীকারোক্তির কথা জানান, সহকারী পুলিশ সুপার গাবতলী সার্কেল তাপস কুমার।

মূল রহস্য উম্মোচন হলেও তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন, থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আল আমিন।

সংবাদ সম্মেলনে এ,এস,পি তাপস কুমার পাল সাংবাদিকদের জানান, ঐ দিন সকালে সারিয়াকান্দি বাজারের পূর্ব পাশে পরিত্যক্ত যায়গায় নাঈমের আগুনে পোড়ানো ভয়ংকর মৃতদেহটি পাওয়া যায়। পরে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে নাঈমের মাতার অভিযোগে তার ৪ বন্ধুসহ সারিয়াকান্দি পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনন্ত শ্রাবন বিশুকে আটক করে সারিয়াকান্দি থানা পুলিশ।

ঘটনার পরের দিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বরুরবাড়ী গ্রাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় নাঈমের ব্যবহিত এপাচী মোটরসাইকেল। ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত না হতেই পুলিশ বিশুর ভাড়া করা বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তাক্ত ছোরা, বালিশ, কাপড়, নাঈমের মানিব্যাগ, জুতাসহ ঘটনার বিভিন্ন আলামত।

এসময় তার ঘরের মেঝে এবং দেয়ালে রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায় এবং হত্যার সময় বিশুর পরনে থাকা রক্তাক্ত জামা প্যান্ট, বিছানার চাদর, বালিশ কভার একটি বালতিতে ভেজানো অবস্থায় পাওয়া যায়।

এই ঘটনায় গত ১৯ অক্টোবর সারিয়াকান্দি থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সবকিছু শুনে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর জিঙ্গাসাবাদে বেড়িয়ে আসে হত্যার করুন রহস্য। খুনী অনন্ত শ্রাবন বিশু নিজেই ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। পূর্ব থেকে নিহত নাঈম তার বন্ধুদের সাথে সারিয়াকান্দিতে বেড়াতে আসার সুযোগে ১৪ই অক্টোবর বিশুর এক সহযোগীর সাথে নাঈমের মোটরসাইকেল লোপাট করার পরিকল্পনা করেন ঘাতক বিশু।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ই অক্টোবর সকাল থেকে সারিয়াকান্দির বিভিন্ন এলাকায় বন্ধুদের সাথে ঘুড়ে বেড়িয়ে দুপুরে বিশুর ভাড়া বাড়িতে আসলে বিশু এবং তার অপর এক সহযোগী কৌশলে নাঈমকে কোমল পানীয়র সাথে ঘুমের ঔষধ পান করান। পরে নাঈমের বন্ধু সাব্বির ও তার মেয়ে বন্ধুকে বিশুর শয়ন কক্ষে রেখে নাঈম ও তার বন্ধু মনি এবং বিশু মিলে এ্যালকোহল (চোলাই মদ) সংগ্রহ করেন পার্শবর্তী ফুলবাড়ী ইউনিয়ন থেকে এবং তা সবাই পান করেন। পরে নাঈমের বন্ধু মনি নেশায় কাতর হয়ে পড়লে তাকে বিশুর বাড়ির অদূরে একটি বাড়িতে বিশ্রাম করতে রেখে আসেন বিশু। এরপর প্রায় বিকাল ৫টায় নাঈমের বন্ধু সাব্বির তার মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলে বিশু এবং তার সহযোগী মিলে নাঈমকে তার নিজ শয়ন কক্ষে নিয়ে আসেন। বাড়িতে কেউ না থাকায় এই সুযোগে অচেতন নাঈমের হাত এবং মুখ টেপ দিয়ে আটকে দেন বিশু ও তার সহযোগী। প্রথমে বিশুর সহযোগী নাঈমের পেটে ছুরিকাঘাত করেন এবং পরে বিশু আঘাত করেন। এসময় রক্তাক্ত চাকু পিচ্ছিল থাকায় পিছলে গিয়ে বিশুর হাতের ৪টি আঙুল আংশিক কেটে যায়। এসময় পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার নাঈমের পেটে ছুরিকাঘাত করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য নাঈমকে জবাই করেন বিশু।

এসময় বিশুর সহযোগী নাঈমের পা শক্ত করে চেপে ধরে থাকেন। জবাই করে নাঈমের মৃতদেহ ঘরে রেখে বিশুর সহযোগীকে রক্তসহ বিভিন্ন আলামত সড়াতে দিয়ে নাঈমের মোটরসাইকেল যোগে সারিয়াকান্দি হাসপাতালে গিয়ে ঘটনার সময় কেটে যাওয়া হাত সেলাই করে নেন বিশু। চিকিৎসা শেষে সদর ইউনিয়নের বিশুর পরিচিত একজনকে নিজের মোটরসাইকেল বলে নাঈমের মোটরসাইকেলটি রাখতে বলেন।

ঘটনার জানাজানি হলে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া সেই যুবক মোটরসাইকেলটি ধান ক্ষেতে রেখে আসেন এবং সেখান থেকে পুলিশ তা উদ্ধার করেন। পরে সুযোগ বুঝে রাত আনুমানিক দুইটার সময় বিশু এবং তার সহযোগী নাঈমের মৃতদেহ বস্তায় করে বিশুর বাড়ি থেকে কয়েক'শ গজ দূরে নির্জন স্থানে নিয়ে নাঈমের পরিচয় লোপাট করার জন্য পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে মৃতদেহটিতে আগুন জালিয়ে দেন। পরদিন সকালে এলাকায় হৈচৈ শুরু হলে আংশিক দগ্ধ অবস্থায় নাঈমের লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ।

এই ঘটনায় ঘাতক বিশু ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন, সারিয়াকান্দি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল আমিন। তিনি বলেন, ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন হলেও তদন্ত চলমান রয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতরা যাতে করে সর্বোচ্চ সাজা পায় সে ব্যাপারে পুলিশ এই মামলার বিভিন্ন আলামত তথ্য আদালতে জোড়ালোভাবে উপস্থাপন করবে।

Bootstrap Image Preview