চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় স্কুলভ্যান থেকে নানী পরিচয়ে অপহরণ করা আট বছর বয়সী শিশু আওসাফ হোসেন জারিফের সন্ধান মিলেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার বাউরিয়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় তাহমিনা (২৮) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, বাউরিয়া ইউনিয়নের নাজিরহাট এলাকা থেকে এই নারী নিজেকে শিশু জারিফের নানী পরিচয় দিয়ে তাকে অপহরণ করেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় ‘আইল্যান্ড কিন্ডারগার্টেন’ স্কুল ছুটির পর ভ্যান থেকে বোরকা পরা এক নারী নানীর পরিচয়ে জারিফকে নামিয়ে সিএনজিতে তুলে নিয়ে যান। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর পেয়ে বাউরিয়া ইউনিয়নের একটি বাড়ি থেকে শিশু জারিফকে উদ্ধার করা হয়েছে। শিশু জারিফ সুস্থ আছে। তাকে তার পরিবারের হাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় ওই বাড়ি থেকে তাহমিনা নামে এক নারীকে আটক করা হয়েছে। শিশু জারিফকে অপহরণে তার ভূমিকা আছে বলে সন্দেহ করছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
এদিকে অপহৃত শিশু জারিফের বাবা মোহাম্মদ জ্যাকব বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে জারিফকে উদ্ধারের বিষয়টি আমাদের জানায় পুলিশ। পরে আমি গিয়ে ওসির কাছ থেকে জারিফকে বুঝে নেই। কে বা কারা তাকে অপহরণ করেছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানতে পারিনি, পুলিশও আমাদের জানায়নি। জারিফ শুধু কাঁপছে। কোনো কথা বলতে পারছে না।
জানা গেছে, অপহরনের পর চিরকুটটি জারিফের স্কুল ড্রেসের পকেটে রেখে তা পাঠানো হয় তাদের বাড়িতে। বুধবার রাতের কোন এক সময় এই জামা রেখে আসা হয় জারিফদের বাড়ির দরজার সামনে। সকালে সেই জামা থেকে চিরকুট পেয়ে থানায় যোগাযোগ করেন জারিফের বাবা মো. জ্যাকব।
এরই মধ্যে তারেক, সজিব, শাকিল ও ফিরোজ নামে স্থানীয় ৪ যুবক চিরকুটে থাকা মোবাইল নাম্বারটি শনাক্ত করতে সাহায্য নেন রবিতে কাজ করা তাদের এক বন্ধুর। সেই বন্ধু আরেক ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় নিশ্চিত হন নাম্বারটি তাহমিনা আক্তার নামে এক নারীর। জাতীয় পরিচয়পত্র বের করে নিশ্চিত করা হয় তাহমিনার বাড়ির ঠিকানাও। দেখা যায়, জারিফদের বাড়ির মাত্র এক কিলোমিটার দূরে সেই তাহমিনার বাড়ি।
অপহরণকারীর ঠিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর তিনটি দলে ভাগ হয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। সাদা পোশাকে পুলিশের একটি দল ছিল নাজির হাটের আশপাশে। তাহমিনার বাড়ির কাছাকাছি আরিফ, পারভেজ ও রাজিবসহ ছিলেন জারিফের বাবা জ্যাকব। আর তারেকসহ সেই চার যুবক যান তাহমিনার ঘরে। তিন মিনিটের মধ্যেই অন্ধকার এক রুম থেকে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় তারা উদ্ধার করেন জারিফকে। এরপর পুলিশ এসে আটক করে অপহরনকারী তাহমিনাকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাহমিনা জানায়, স্থানীয় ৩-৪ জন যুবক তাকে এই অপহরণ করতে বাধ্য করেছে। পুলিশ এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে নেপথ্যের সেই হোতাদের।
সন্দ্বীপ থানার ওসি মো. শাহজাহান বলেন, সবার সহযোগিতায় পুলিশ অক্ষত অবস্থায় শিশু জারিফকে উদ্ধার করেছে। স্থানীয় এক নারীকে ব্যবহার করে একটি চক্র এই অপহরণ নাটকটি সাজিয়েছিল। আমরা তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
জারিফের বাবা মো. জ্যাকব বলেন, জারিফের স্কুল ড্রেসে চিরকুটটি রেখে বাড়ির সামনে রাতে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। এর সূত্র ধরে স্থানীয় চার যুবক ও পুলিশের সহায়তায় জারিফকে উদ্ধার করি আমরা। পুলিশ ছদ্মবেশে ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে ছিল।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে বাউরিয়া আইল্যান্ড কিন্ডার গার্টেনের সামনে থেকে অজ্ঞাত এক নারী মায়ের পরিচয়ে শিশু জারিফকে স্কুলভ্যান থেকে কৌশলে নামিয়ে সিএনজি যোগে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। বিষয়টি জেনেই পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম থেকে ছুটে আসে সীতাকুন্ড সার্কেলের এএসপি শম্পা রানী সাহাসহ ডিবির একটি টিম। অবশেষে গোপন খবরের ভিত্তিতে দুপুরে সন্দ্বীপ থানার ওসি মো: শাহাজাহানের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মো: সোহরাওয়ার্দী, এসআই মো: হেলাল খান, এএসআই ওয়াসিম মিয়া, এএসআই মোর্শেদসহ পুলিশের একটি দল বাউরিয়া ৬নং ওয়ার্ডের রহমত মাঝির বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে অপহৃত জারিফকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ ওই বাড়ি থেকে তাহমিনা (২৬), ও তার স্বামী মো: দেলোয়ার হোসেনকে আটক করে। এর আগে এ ঘটনায় সন্দ্বীপ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রুজু হয়।
আটক তাহমিনা বলেন, স্থানীয় একটি চক্র আমাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছে। আমি তাদের নাম পুলিশকে বলেছি।