Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অপরূপ সাজে সজ্জিত 'চা কন্যার ভাস্কর্য'

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:১৮ PM
আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৪১ PM

bdmorning Image Preview


শ্রী আর মঙ্গলে নিহিত শ্রীমঙ্গল। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত সবুজ শ্যামলের সমারোহে ভরপুর এ অঞ্চলের অন্যতম উপাদান হচ্ছে চা। চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলকে দু'টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশও বলা হয়ে থাকে। দেশের অধিকাংশ চা বাগান শ্রীমঙ্গলের চারদিকে বেষ্টিত। এ অঞ্চলের লেবু ও আনারসের কদরও কম নয়। পাহাড় ও চা বাগান বেষ্টিত বৃহত্তর সিলেটের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছোট্ট শহর শ্রীমঙ্গল। 

সড়কপথে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে যেতে পাহাড় ও চাবাগানের বুক চিরে অাঁকাবাঁকা পথ ধরে বয়ে গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। হবিগঞ্জের সীমানা পেরিয়ে আসতে থাকে শ্রীমঙ্গল তথা মৌলভীবাজার জেলা। দুই জেলার সংযোগস্থলে রয়েছে 'মুছাই' নামে একটি এলাকা। পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং চাশ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনস্বরূপ শ্রীমঙ্গলের প্রবেশদ্বারে নির্মাণ করা হয়েছে।

অপরূপ সাজে সজ্জিত এক 'চা কন্যার ভাস্কর্য'। এখানে বেড়াতে আসার পথে ভাস্কর্যটি দেখে যে কেউ মনে করবেন, তিনি চা শিল্পাঞ্চলে প্রবেশ করেছেন। শ্রীমঙ্গলসহ দেশের সব চাশ্রমিকের ভালোমন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবই যেন মিলেমিশে আছে এই ভাস্কর্যটির মধ্যে। চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর এই ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য অবলোকনে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে।

এরই ধারাবাহিকতায় নিভৃত অরণ্যভূমি শ্রীমঙ্গল বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করছে। ক্রমে পর্যটকদের মনে পর্যটন অঞ্চল শ্রীমঙ্গল ও এতদঞ্চলের চাশ্রমিকদের বিষয়ে জানার আগ্রহ দিনদিন বেড়েই চলছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হবিগঞ্জ জেলার শেষ সীমান্তে এবং মৌলভীবাজার জেলার প্রবেশদ্বারের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার আমতলী চাবাগান সংলগ্ন মুছাই বাজার। এখানে শ্রীমঙ্গলে প্রবেশ পথে রাস্তার বাম পাশে অবস্থিত এই 'চা-কন্যার ভাস্কর্য'।

২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির প্রকৌশলী সঞ্জিত রায়ের হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় দীর্ঘ প্রায় তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অপরূপ সৌন্দর্য আর কারুকাজে একদিকে যেমন প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গলের পরিবেশ ও প্রতিচিত্রের রূপ তেমনইভাবে ফুটে উঠেছে কারুশিল্পকারের হাতের নৈপুণ্যতা। প্রায় ২৪ ফুট উঁচু এই ভাস্কর্যটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নারী চাশ্রমিকের কোমল হাতে চাপাতা চয়নের মনোমুগ্ধকর এক নিপুণ প্রতিচ্ছবি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই ভাস্কর্যটি শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

প্রতিদিন হাজারো পর্যটককে এর সৌন্দর্য উপভোগ ও এর পাদদেশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়। প্রকৃতি প্রেমীরা যেন অনায়াসে উপভোগ করতে পারেন চাবাগান এবং চাশিল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত চা জনপদের নারী চা শ্রমিকদের। সেজন্য এ বিষয়টিকে শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এই ভাস্কর্যে।

মৌলভীবাজার জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলাম দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চা শ্রমিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে শ্রীমঙ্গল তথা মৌলভীবাজারের সৌন্দর্য বর্ধন ও চা শ্রমিকদের শ্রম-সাধনার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে এবং চা শিল্পের সঙ্গে চা শ্রমিকের নিবিড় সম্পর্কের চিত্র ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে চা কন্যার ভাস্কর্যটি নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে সাতগাঁও চা বাগানের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে সাতগাঁও চাবাগানের অর্থায়নে ভাস্কর্যটি নির্মাণ ব্যয় হিসেবে ১০ লাখ টাকা নির্বাহ করা হলে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমীর ভাস্কর্যশিল্পী সঞ্জিত রায় এটি তৈরি করেন।

 

Bootstrap Image Preview