আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার, নির্বাচন কমিশন, ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও ঐক্যফ্রন্টসহ সকল রাজনৈক দলের প্রতি ১২ দফা প্রস্তার রেখেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটি (এলডিপি)।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বনানীতে এলডিপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পার্টির প্রেসিডেন্ট ও দলীয় জোটের প্রধান সমন্ময়ক কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম এ প্রস্তাব পেশ করেন। এসময় তিনি জানান, আগামী রবিবারে এ ১২ দফা নির্বাচন কমিশনের কাছেও তুলে ধরা হবে।
জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমরা পঙ্গুত্ব বরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সরকারি ও আধা সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীদের দলীয় আনুগত্যের স্বীকার করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রদাণ হচ্ছে না। বেকার সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন নতুন ব্যাংক অনুমোদনের ফলে অর্থনীতিতে যেকোনো সময় ধস নামতে পারে।
অলি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দলীয় ঐক্যজোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, এলডিপির উত্থাপিত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিজ নিজ নির্বাচনি ম্যানিফেষ্টুতে অন্তর্ভূক্ত করে সকলকে আশ্বস্ত করবে।
১২ দফা হলো:
১, বিগত দশ বছরে যে সমস্ত কর্মকর্তা / কর্মচারী দলী আনুগত্যের মাধ্যমে সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য দায়িত্ব পালন করেছে, তারা যদি নির্বাচনের সময় সম্পুর্ন নিরোপেক্ষভাবে কাজ করে তাহলে তাদের কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। সকলের প্রতি সমান আচরণ করা হবে।
২, যে সমস্ত সরকারি কর্মকতা/কর্মচারী ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন বা পালনের জন্য প্রস্তুত থাকে তাদেরকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩, পুলিশ বাহিনীর জন্য বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে পৃথক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হয়ে। এতে করে তাদের সূচিকিৎসা নিশ্চিত হবে এবং তাদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের স্বল্প বেতনে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ হবে।
৪, পুলিশ প্রশাসনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে সদা সবদা নিরপেক্ষ রাখার বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে। অর্থাৎ চিরতরে দলীয়করণ বন্ধ করা হবে। সকল স্তরে মেধা এবং যোগ্যতার বিকাশ ঘটাতে হবে।
৫, সকল ক্ষেত্রে নিয়োগ বানিজ্য এবং পোষ্টিং বাণিজ্য বন্ধ করা হবে।
৬, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, প্রশাসন, দুদক এবং নির্বাচন কমিশনসহ সকল গুরুত্বপূণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।
৭, ডিজিটাল আইন সংশোধন করা হবে।
৮, যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা নির্বাচনের দায়িত্ব পেতে পারেন বা সম্ভাবনা রয়েছে, যদি ঐ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের উচিত সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য অনতিবিলম্বে ঐ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতিকে অপসারণ করা।
৯, বিভিন্ন নির্বাচনরি এলাকার প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাত দেখিয়ে থানার অফিসারগণ তাদেরকে হয়রানি করছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত অনতিবিলম্বে তা বন্ধ করা।
১০, সরকার বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাভিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত এবং তাদের এ দূর্বিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য সাবেক অনেক সচিবকেও বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের নামে তাদের উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত অনতিবিলম্বে তা বাতিল করে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো।
১১, এছাড়াও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর বিগত কয়েকদিনে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং রিমাণ্ডে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। আমরা মনে করি, এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্থ হতে পারে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে হস্তক্ষেপ কামনা করি।
১২, প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে সকলকে বের হয়ে আসতে হবে। ধৈয্য ধারণ করতে হবে, সহণশীল হতে হবে রক্তপাত এড়াতে হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।