Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অধিবাসের মধ্যদিয়ে রাস মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু, প্রত্যুষে পূর্ণিমা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১১ PM
আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১২ PM

bdmorning Image Preview


শুরু হচ্ছে শ্রী শ্রী কৃষ্ণেরে উৎসককে ঘিরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় আগমন ঘটেছে প্রায় লাখো সনাতন ধর্মাবলম্বীর। এরই মধ্যে কুয়কাটায় আগমন ঘঠেছে দেশী-বিদেশী পুন্যার্থী, সাধূ-সন্ন্যাসীসহ ভক্ত-দর্শনার্থীর। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস মেলাকে ঘিরে উৎসবের রংয়ে সেজেছে কুয়কাটা রাধাকৃষ্ণ সেবাশ্রম ও কলাপাড়া মোদনমোহন সেবাশ্রম এলাকা।

বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) রাতে অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে শ্রী শ্রী কৃষ্ণের রাস মেলার আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার প্রত্যুষে পূর্ণিমা তিথিতে পুর্ণ্যস্থানের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও এ মেলা চলবে প্রায় সপ্তাহব্যাপী।

এ ব্যাপারে কুয়াকাটা রাসমেলা আয়োজক কমিটি জানায়, প্রায় দুইশ' বছর ধরে কুয়াকাটা সৈকতে ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে রাস পুর্ণিমার মেলা। বুধবার থেকে শুক্রবার এ তিন দিন কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাস্নান ও রাস পুর্ণিমার মেলা। বুধবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে শুরু করেছে পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা। এ বছর রাসমেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগাম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শ্রী শ্রী রাধাকৃঞ্চ মন্দিরের পুরোহিত শিশির মহারাজ ব্রহ্মচারী জানান, সন্ধায় সন্ধা আরতি, নাম কীর্তন, ভোগ প্রসাদের মধ্য দিয়ে শুরু হবে রাস পুজা। ভোরে ভগবাত পাঠ, নাম কীর্তণ, সন্ধায় সন্ধা আরতি, উদ্বোধণী অনুষ্ঠান, ধর্মীয় আলোচনা, ক্লোজ আপ ওয়ান  শিল্পী লায়লা আকতার, প্রিয়াংকা বিশ্বাস ও ছোট নকুল শিল্পীর পরিবেশনায় সংগীত অনুষ্ঠান ও রাতভর নাম কীর্তণ। ২৩ নভেম্বর সূর্যোদয়ের পর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পুণ্যার্থীরা গঙ্গাস্নান করবেন। পুণ্যার্থীদের গঙ্গাস্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হবে তিনদিন ব্যাপী রাস পুর্ণিমার মেলা ও গঙ্গাস্নান।

কলাপাড়া মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির যুগ্ন আহবায়ক উত্তম কুমার হাওলাদার জানান, পূন্যস্নান কুয়কাটায় হলেও মুল ধার্মীয় আনুষ্ঠানিকতা হয় কলাপড়ায়। এখানে মেলা চলবে পাচ দিন।

কুয়াকাটা রাস পুজা উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উত্তম দে জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আয়োজন অনেক বেশি। গঙ্গাস্নান ও রাসমেলাকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শ্রী শ্রী রাধাকৃঞ্চ মন্দিরের সামনে প্যান্ডেল, গেট ও আলোকসজ্জার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। মন্দিরে রাধা কৃঞ্চের ১৭ জোড়া যুগল প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। গুরুত্বপুর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) রাত নয়টায় রাস পুজার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধণ করবেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার।

রাসমেলায় বিভিন্ন স্থান থেকে ভাসমান দোকানীরা নানা রকমমের পন্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তবে ভাসমান ব্যবসায়ীরা অভিযোগ, একটি গ্রুপ সৈকতে পজেশণ দেয়ার নাম করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কুয়কাটা পৌর মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা জানান, মেলা উপলক্ষে সকল প্রকার ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। খাবার পানি, টয়েলেট, নারী পূন্যার্থীদের পোষাক পরিবর্তনের জায়গাসহ সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রায় পঞ্চাশ জনের মতো সেচ্ছাসেবক থাকবে। পূন্যার্থীদের আবাসন সুবিধায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেয়া হবে।

কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পুণ্যার্থীদের সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পুণ্যস্নান শেষে কাপড় পাল্টানোর জন্য অস্থায়ী গোসল খানা, নলকুপ বসানোসহ তিনদিন ব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থাকবে। আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল ক্যাম্পসহ থাকছে তথ্য সেবা কেন্দ্র। আগত পুণ্যার্থীদের আলাদা কোনো আবাসন ব্যবস্থা না থাকলেও কুয়াকাটায় অবস্থানরত আবাসিক হোটেল গুলোতে যাতে কম ভাড়ায় থাকতে পারে সেজন্য হোটেল মালিকদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে আগাম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের র্নিবিঘ্নে চলাচলে কুয়াকাটা টেলি যোগাযোগ ভবন থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত এবং পৌর এলাকার মুল শহরের মধ্যে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। সমুদ্র সৈকতেও যানবাহন চলাচল করার উপর থাকবে নিষেধাজ্ঞা।

মহিপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের পাশাপাশি পুরো এলাকা রয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। ২কি.মি এলাকা জুড়ে থাকবে পুলিশের প্রহরা। রাসপুজা ও মেলায় পুলিশের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে রাখতে র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, গ্রাম পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন থাকবে। সমুদ্র পথে আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সমুদ্রে নৌ টহল থাকবে। সৈকতের গঙ্গামতি, লেম্বুরবন, রাখাইন মন্দিরসহ দর্শনীয় স্পটে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। মেলায় থাকবে সেচ্ছাসেবক টিম। সড়ক পথও থাকবে পুলিশের নজরদারীতে।

Bootstrap Image Preview