Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিচার চাইল বিএনপি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:২৫ PM
আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:২৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করায় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেছে বিএনপি। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বৈঠক করতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছে দলটি।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বরাবর একটি অভিযোগের চিঠি দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। চিঠিটি গ্রহণ করেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

চিঠিতে বলা হয়, গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন থেকে সকল রিটার্নিং অফিসারকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়। পরে ১৩ নভেম্বর কমিশনে তাদের নির্বাচন বিষয়ে ব্রিফ করা হয়। ইসি থেকে যখন রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্ব স্ব জায়গায় ফেরত যাচ্ছিলেন, তখন জরুরি ভিত্তিতে তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তলব করা হয়। তখন তারা সেখানে গিয়ে বৈঠক করেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানাতে পেরেছি সেখানে আসন্ন নির্বাচনে সরকারি দলের পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের ব্রিফ করা হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসাররা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকার পরও কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের ডেকে পাঠানো হয়। ‘এ ধরনের আচরণ একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিরাট অন্তরায়। এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য অশনিসংকেত।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ইসির অনুমতি ছাড়া টেলিফোনে রিটার্নিং অফিসারদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে সভা করা আরপিও অধ্যায়-৬ এর আর্টিকেল ৭৩/২বি এর বিধানমতে ‘করাপ্ট প্যাকটিস’, যা শাস্তিযোগ্যে অপরাধ। এ অবস্থায় বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিচার করা দাবি জানানো হয় বিএনপির তরফ থেকে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, রিটার্নিং অফিসারদের ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের টেলিফোন কললিস্ট যাচাই করে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওইদিনের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করলেই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা যাবে।

অপরদিকে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেছে বিএনপি। শুধু সচিব নন; ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সংশ্লিষ্ট জোনের উপ-কমিশনার ও সচিবালয়ের যুগ্ম সচিবেরও শাস্তি চাওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়। বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে এই বিচার চাওয়া হয়। চিঠিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে দেয় প্রতিনিধি দল।

দলটি দাবি করেছে, নির্বাচন কমিশন থেকে আচরণবিধি পালন সংক্রান্ত চিঠির পরই এই ঘটনা ঘটেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাস্তা বন্ধ করে যানজট সৃষ্টি করে মনোনয়নপত্র বিতরণ করে । মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঢাকাঢোল পিটিয়ে মোটরসাইকেল, গাড়ি, পিকআপে বিভিন্ন স্থান থেকে ধানমন্ডি যায় এবং রাস্তাঘাট বন্ধ করে মনোনয়ন সংগ্রহ করে। এছাড়া নিজেদের প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুজন নিহত হয়। এ সময় পুলিশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। অথচ বিএনপির মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে স্বতস্ফূর্ত জনগণের ঢল দেখে নির্বাচন কমিশন সচিব ও ডিএমপি কমিশনারের গায়ে জ্বালা ধরে।

কমিশন নড়েচড়ে বসে। ‘কথিত আচরণবিধি’র নামে খড়্গ নেমে আসে বিএনপির ওপর। ইসি সচিব গণমাধ্যমে আচরণবিধি পালনের কঠোর হুমকি নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করে। এটি একটি পক্ষপাতমূলক আচরণ।

১৩ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি প্রতিপালনের নির্দেশনা নেতাকর্মী, সমর্থকসহ জনগণের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের দেয়া বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক এবং ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামানের বক্তব্যে ঘটনা সংগঠনের স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলেও মন্তব্য করা হয়েছে চিঠিতে।

আওয়ামী লীগের জনসমাগমে এ ঘটনা ঘটেনি কিন্তু বিএনপির সময় ১৪ নভেম্বর এ ঘটনা কীভাবে ঘটল?

এই ‘সন্ত্রাসী’ হামলায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় ৪৭২ জন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করেছে। ৭০ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং ৩৮ জন নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় ‘নির্বাচন কমিশনের সচিব, ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের কমিশনার, সংশ্লিষ্ট জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং জারিকৃত পত্রের স্বাক্ষরকারী নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এর আগে বুধবার রাতেই বিস্ফোরক ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, বিশেষ আইনে এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনে পল্টন থানায় মামলা তিনটি দায়ের করে পুলিশ।

২১ নম্বর মামলার বাদী হলেন, পল্টন থানার এসআই সোমেন কুমার বড়ুয়া, ২২ নম্বর মামলার বাদী এসআই আল আমিন এবং ২৩ নম্বর মামলার বাদী এসআই শাহীন বাদশা। তিনটি মামলার এজহারে মোট ৪৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সহস্রাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview