আটাশ বছর বয়সী এরেক্কু চাকমা। স্ত্রী অন্তরা চাকমার উপর প্রতিশোধ নিতে নিজের পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকেই গলাটিপে হত্যা করেন তিনি। এরেক্কু চাকমা বেকার। বেকারত্ব নিয়ে ‘স্ত্রীর খোঁচা’ দেওয়া সহ্য করতে না পেরে স্ত্রীর ওপর প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি।
তবে ঘটনার ১০ দিনের মাথায় রবিবার (১৮ নভেম্বত) আটক হন এরেক্কু চাকমা। তারপর সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করে নিজেই আদ্যোপান্ত জানান পুলিশকে। বিকালে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে ৯ নভেম্বর বিকাল ৫টায় পিতার হাতে ছেলে হত্যার এই নির্মম ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থল রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ার বগাপাড়া এলাকা।
ঘাতকের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, খাগড়াছড়ি গামরী ঢালা এলাকার বাসিন্দা মৃত সুবল চাকমার ছেলে এরেক্কু চাকমা (২৮) স্ত্রীসহ চট্টগ্রামে বসবাস করতেন। ৮ নভেম্বর কর্মস্থলে যাওয়ার আগে স্ত্রী একমাত্র সন্তানকে স্বামীর হেফাজতে রেখে যান। কিন্তু এরেক্কু তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে দুজনের মাঝে বাগ্বিতণ্ডা হয়। সন্তানের দেখাশোনা করতে অপারগতার ফলে স্ত্রী রাগান্বিত হয়ে সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যেতে বলেন স্বামীকে।
৯ নভেম্বর স্ত্রী কর্মস্থলে চলে গেলে এরেক্কু চাকমা ছেলে নীরবকে নিয়ে কাউখালীর ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম বগাপাড়া এলাকায় যান। দিনভর এদিক-সেদিক ঘুরোঘুরি করেন। সারা দিনের ক্ষুধার্ত শিশু বাবার কাছে বারবার খাবারের জন্য আকুতি জানাচ্ছিল। কিন্তু কোনো খাবার পায়নি।
বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পাষণ্ড পিতা নীরবকে বগাপাড়ার নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে হত্যা করে মাটি ও জঙ্গল দিয়ে চাপা দিয়ে চলে যান। এদিকে দীর্ঘ সময় স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন স্ত্রী। পরে স্বজনদের কাছে জানতে পারেন, তার স্বামী রাঙামাটি রাজবন বিহারে অবস্থান করছে।
গতকাল (১৮ নভেম্বর) স্বজনরা স্থানীয়দের সহায়তায় এরেক্কুকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি নিজ সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে কাউখালী থানায় সোপর্দ করে স্ত্রী ও স্থানীয়রা। এরেক্কুর ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশ তাকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
কাউখালী থানার ওসি মো. মনজুর আলম বলেন, ঘটনাটি নির্মম। নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের পরিবর্তে নিজের বাবার হাতেই খুন হতে হলো শিশু সন্তানটিকে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি পাঠানো হয়েছে। থানায় হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে।