Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্বাচনী হাওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে ছাপাখানায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১০:১২ AM
আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১০:১২ AM

bdmorning Image Preview


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ছাপাখানায় মালিক শ্রমিকদের ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে। আর নির্বাচন ঘিরে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন তৈরিতে কাগজ ও রঙ স্টকে রাখছেন ছাপাখানার মালিকরা। মূলত এখন থেকেই তারা এক ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মনোনয়নের দৌঁড়ে টিকতে নেতাকর্মীরা আগে থেকেই নিজেদের প্রচারণার জন্য এক দফা পোস্টার তৈরি করে নিয়েছেন। আর বর্তমানে নির্বাচনে অংশ নিতে নেতাদের মনোনয়ন ফরম ক্রয়, জমা ও বাছাইয়ের কাজ চলছে। সম্পূর্ণ বাছাই ও দলীয় প্রতীক বরাদ্দ পেলেই নেতা কর্মীরা তাদের মার্কা নিয়ে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরিতে নতুন করে অর্ডার দিবেন। আর এ সময়ের বাজার ধরতে ছাপাখানার মালিক থেকে শুরু করে কর্মীরা এখন প্রস্তুত। 

এদিকে জনসাধারণের কাছে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে গত দুই থেকে তিন মাস আগ থেকেই গ্রাম ও শহরের রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজেদের নাম ও ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন বানিয়েছেন। সঙ্গে চালাচালি করেছেন ছোট আকারের ছবি সংবলিত ইস্টিকার। এতে পরিচিত নেতাকর্মীদের পাশাপাশি প্রচারণায় নেমেছেন অপরিচিত কর্মীরাও।

আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই ডামাডোলে দীর্ঘ মন্দার পর কর্মব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার ও বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল সংলগ্ন ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকার ছাপাখানায়। আর নির্বাচন উপলক্ষে শুভেচ্ছা কার্ড, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছাপাখানার শ্রমিকরা।

এদিকে পুরানা পল্টন এলাকার নুরজাহান প্লাজা’র রনি প্রডাক্টস এর মালিক গোলাম সারওয়ার বিডিমর্নিংকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে পোস্টার তৈরির অর্ডার আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন পত্র নেয়ার আগে প্রচারণার কাজে এক দফা পোস্টার বানিয়ে নিয়ে গেছেন নেতাকর্মীরা। তবে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার পর ও নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে দলীয় প্রতীক বরাদ্ধ পাবার পর নেতা কর্মীরা নতুন করে পোস্টার অর্ডার করা শুরু করবেন। তবে যে সব নেতারা নিশ্চিত ভাবে মনোনয়ন পাবে বলে মনে করছেন, তারা আগে ভাগে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য পোস্টার তৈরির অর্ডার করে গেছেন। সব মিলে নির্বাচন ঘিরে পোস্টার তৈরিতে ছাপাখানায় ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মূলত বছরের পুরোটা সময় ডায়রী ও ক্যালেন্ডার তৈরি করি। আর নির্বাচন বা কোন দিবসে পোস্টার তৈরি করি। কিন্তু এবার নির্বাচন ও ইংরেজী নববর্ষ মিলে পোস্টার, ক্যালেন্ডার ও ডায়রী তৈরির কাজ এক সঙ্গে হওয়ায় অনেক হিমসিম হতে হবে।

পুরান ঢাকার নয়াবাজারের জিন্দাবাহার এলাকার রিপন প্রিন্টার্স এর মালিক মো. সাইফুল ইসলাম (নয়ন) বিডিমর্নিংকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পোস্টার তৈরিতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা পোস্টার তৈরির জন্য পর্যাপ্ত কাগজ, বিভিন্ন কালারের রং ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ প্রস্তুত রেখেছি। আর সব কিছু ঠিক থাকলে নির্বাচনের দলীয় প্রতীক বরাদ্দ হয়ে গেলে পোস্টার ছাপানোর অর্ডার আসতে শুরু করবে। এ জন্য সব মিলে আমরা ছাপাখানার কর্মী ও মালিকদের মধ্যে এক ধরনের ব্যস্ততা কাজ করছে। 

রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকার বাংলাদেশ প্রিন্টার্সের মালিক মো. মোবারক হোসেন বিডিমর্নিংকে বলেন, ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকার ছাপাখানা ব্যবসায় কয়েক বছর ধরেই মন্দা বিরাজ করছে। গত বছর ঈদ ও বৈশাখ ঘিরে কোন কাজের অর্ডার আসেনি। তবে এই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা আশাবাদি। ইতি মধ্যে নেতাদের মনোনয়ন ফরম বাছাই করার আগেই ৫টি কাজ পেয়েছিলাম। আর এ কাজগুলো শেষ হয়েছে। এবার নতুন করে কাজের অর্ডারের অপেক্ষায় আছি। মনে হচ্ছে এতোদিন পর ছাপাখানাগুলোতে নির্বাচনী আমেজ লেগেছে।

একই স্থানের আলিফ প্রিন্টার্সের মালিক রাজু বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে এক প্রকার রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়। অস্থির রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও কার্ডের ব্যবসায়। এরপর রাজনৈতিক সঙ্কট কাটলেও রাজনৈতিক কার্যক্রম অনেকটাই থমকে দাঁড়ায়। ফলে উৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় থেকে যায় আড়ালে। তবে এ বছর জাতীয় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করায় মনে হচ্ছে এই ছাপাখানা আবার সচল হবে। আর ইতিমধ্যে কাজের অর্ডার আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনের বাজার ধরতে আমরাও প্রস্তুত আছি। মনে হচ্ছে সব মিলে ভালো ব্যবসা হবে। 

এদিকে আরামবাগ এলাকার এম আর প্রিন্টার্সের মালিক ফারুক বলেন, এবার নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত কাজ পেয়েছি ৬টি। ঢাকার বাইরে থেকেও কাজ এসেছে। সবগুলো কাজ শেষ করে মাল গ্রাহককে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নেতারা মনোনয়ন পেলে ও নির্বাচনের প্রতীক পেলেই আবার নতুন করে দলের প্রতীক নিয়ে পোস্টার তৈরির কাজ আসবে। সব মিলে এখন একটু ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

এ সব ছাপা খানার কর্মীরা বলছেন, গত এক মাস ধরে কাজের চাপ একটু বেড়েছে। যেখানে এক মাস আগে বিভিন্ন দোকানের ক্যাশম্যামো, ভিজিটিং কার্ড বানানোর কাজ করতে হতো, এখন নির্বাচনের জন্য নেতাদের পোস্টার ও স্টিকার বানাতে হচ্ছে। আর নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসবে এই কাজ আরও বাড়বে। এতে করে আমরা বাড়তি কিছু টাকা আয় করতে পারবো।

Bootstrap Image Preview