Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও প্রত্যাবাসনে অনীহা রোহিঙ্গাদের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৪৩ PM
আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৪৩ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে আগামীকাল। প্রথম দফায় উখিয়ার জামতলী ও টেকনাফের উনচিপ্রাং শরণার্থী শিবির থেকে ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন্য রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের কথা রয়েছে।

প্রত্যাবাসন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ক্যাম্প দুটিতে নিরাপত্তা জোরদারসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে মিয়ান মারে ফিরতে চাইছেনা অনেক রোহিঙ্গা। এমনকি প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকায় থাকা অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বেড়াচ্ছেন।

উখিয়ার জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ ড. মো. শফিক উদ্দিন জানান, এই ক্যাম্প থেকে প্রথম দফায় ১২১ পরিবারের প্রায় পাঁচশো রোহিঙ্গার নাম তালিকায় রয়েছে। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ক্যাম্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝানো হচ্ছে। ক্যাম্পের ইমাম, মাঝি, স্বেচ্ছাসেবক, ব্লক উন্নয়ন কমিটির লোকজনকে নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করা হচ্ছে। টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

শফিক উদ্দিন আরো বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য বান্দবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম ও টেকনাফের কেরুনতলী সীমান্তে দুটি ট্রানজিট ক্যাম্পও তৈরি করা হয়েছে।

ক্যাম্পে কর্মরত একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তালিকায় নাম আছে এটি জানার পর থেকেই রোহিঙ্গারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘরে নতুন কোনো মানুষ যাচ্ছে দেখলেই তারা লুকিয়ে যান।

তালিকায় নাম আছে জানিয়ে জামতলী ১৫ নম্বর ক্যাম্পের রহিম মোস্তফা (৫০) বলেন, আমরা সেখানে যাব না। আরাকানে যারা আছে তাদের এখনো নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি, এখন আমরা কিভাবে যাব? আগে তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেখাতে হবে। বার্মা এর আগেও আমাদের এনভিসি কার্ড দিয়েছে। এই কার্ডের বদলে নাগরিকত্ব কার্ড দিবে বললেও দেয়নি।

একই ক্যাম্পের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা হাবিবা খাতুন বুক চাপড়ে বলেন, ‘এখানে মারা গেলে কিছু না হলেও জানাজা পড়া যাবে, ওখানে জানাজাও পড়া যাবে না। অনেক নির্যাতনের পর আমরা এখানে তোমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে আমাদের মেরে ফেললে মেরে ফেলো তবুও সেখানে যাব না।'

মিয়ানমারের রাখাইনের বলিবাজার থেকে এসে আশ্রয় নেওয়া রহিম মোস্তফা বলেন, সেখানে নিয়ে গিয়ে আমাদের কাঁটাতারের বেড়ার ঘেরায় বন্দি করে রাখবে। আমাদের যদি বাড়ি-ঘর, ভিটে-মাটি ফিরিয়ে দিয়ে সেখানে নিয়ে যেত তাহলে যেতাম। এখন আমরা কোথায় যাব?

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত করার জন্য এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিচেলি ব্যাচিলেট। এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন করা হলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হবে এবং রোহিঙ্গাদের জীবন ও স্বাধীনতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত বছর ২৫ আগস্টের পর থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে দেশে ফেরাতে গত বছর ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার উভয় দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সই হয়। 

চুক্তি অনুসারে ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও এক বছর পেরিয়ে গেলেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। এ অবস্থায় প্রত্যাবাসনের জন্য গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর থেকে প্রথম দফা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview