Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাহসী সাংবাদিক হিসেবে হৃদয় দেবনাথ বর্তমানে একটি উদাহরণ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:০৮ PM
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:১৩ PM

bdmorning Image Preview


মফস্বলে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় তরুণ সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ বর্তমানে একটি উদাহরণ। একজন সাহসী সাংবাদিক হিসেবে মৌলভীবাজার জেলা তথা ঢাকার জাতীয় সাংবাদিকসহ সর্বমহলেই তিনি অতি প্রিয় ও পরিচিত একটি মুখ। সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব, সততা ও সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা বিশেষ করে সাহস করে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের উপর অনুসন্ধানি প্রতিবেদন তাকে খুব অল্প সময়ে নিয়ে এসেছে এক অনন্য উচ্চতায়।

সাংবাদিকতা জীবনে আজও পর্যন্ত তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। স্বার্থ, প্রলোভন, অর্থ, বিত্ত তাকে দমাতে পারেনি এখনো।নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা প্রভাবিত হতে পারে এই ভেবে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে নিজেকে জড়াননি।

প্রায় ৮ বছর ধরে মফস্বলে সাংবাদিকতা করছেন হৃদয় দেবনাথ।৩৬০ আউলিয়ার পুন্য ভূমি সিলেট বিভাগের অন্যতম একটি জেলা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা ও গণমানুষের কথাগুলোকে অবিরাম তুলে ধরে যাচ্ছেন তিনি।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে হৃদয় দেবনাথের সাংবাদিকতা জীবনের নানান ঘটনার কথা। হৃদয় দেবনাথ ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখি এবং নাট্য চর্চায় জড়িত। ২০০৭ সালে থেকে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন।পরবর্তীতে ২০১৪ সালে জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল গাজী স্যাটেলাইট টেলিভিশন লিমিটেড (জিটিভি)তে মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি গাজী গ্রুপের স্বনামধন্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারাবাংলা ডট.নেট এ ও মৌলভীবাজার জেলার দায়িত্ব পালন করছেন।

সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে হৃদয় দেবনাথ বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব এবং মৌলভীবাজার টেলিভিশন জার্নালিস্ট মিডিয়া ইমজা'র একজন সম্মানিত সদস্য।

দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বন্ধু মহল থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একের পর এক অসহায়-এতিম রোগাক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি। বিশেষ করে এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের কারণেও সমাজের অসহায়-দরিদ্র মানুষের কাছে সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ একটি ভরসার নাম।

৮ বছরের চলমান সাংবাদিকতা জীবনে হৃদয় দেবনাথ বিভিন্ন অসহায় মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সহ টেলিভিশনের পর্দায় তুলে ধরেছেন। মৌলভীবাজার জেলার নিপীড়িত, লাঞ্ছিত মানুষের ন্যায্য অধিকার নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন লিখে সহস্র মানুষের চিকিৎসা, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি অনেক দুঃসাহসি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।

তার অসংখ্য অনুসন্ধানী অপরাধমূলক রিপোর্ট প্রকাশের পর অনেক সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী বদলি ও সাসপেন্ড হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির।পুলিশের অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করে অনেক মিথ্যে মামলার শিকারও হয়েছেন তিনি। তার লেখা সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত হয়েছে ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবন।

সম্প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা মাদকের উপর অনুসন্ধান করতে গিয়ে কুখ্যাত মাদক ব্যাবসায়ীদের বর্বর হামলারও শিকার হয়েছেন। মাথায় মাদক ব্যাবসায়ীদের দা'র কোপের সেই ক্ষত নিয়ে এখনো নির্ভয়েই কাজ করে যাচ্ছেন তরুণ এ সাংবাদিক। মাদকের উপর অনুসন্ধানী সংবাদের তথ্য সংগ্রহকালে মাদক ব্যাবসায়ীরা যখন বুঝতে পারেন তিনি সাংবাদিক এবং গোপনে তাদের তথ্য সংগ্রহ করছেন ঠিক তখনি প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার উপর হামলা চালায়।

হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় রক্তক্ষরণ হয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হামলাকারীরা মৃত ভেবে পালিয়ে যায়। পুলিশ ও এলাকাবাসী তাকে ঘটনাস্থল থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সন্ত্রাসী কর্তৃক এ হামলার খবরটি দেশের সমস্ত প্রথমসারির পত্রিকা/টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রচার ও প্রকাশ হয়। দীর্ঘ তিনমাস পর সুস্থ হন তিনি। তার পরও সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন মাধ্যমে একের পর এক হুমকি দিতে থাকেন। তবুও নিজের অবস্থান থেকে চুল পরিমান সরে আসেননি সাংবাদিক হৃদয়।

নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের প্রথম দিকে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য, থানায় দালালদের দৌরাত্ম, থানার গেইট নির্মাণের নামে ওসির চাঁদা বাণিজ্য,পুলিশের অবহেলায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। তিনি জানান, আমার লেখা প্রতিবেদনগুলো প্রচার ও প্রকাশের পর প্রতিটা সংবাদ আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে আপলোড দেয়।ফলে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত এসব সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে শেয়ারের পর শেয়ার হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পরে এবং ফেসবুকে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে করে অনেক পুলিশ অফিসারের চাকরি চলে যায়।

হৃদয় দেবনাথ জানান, ঠিক তারপর থেকেই প্রশাসন থেকে আমার ওপর বিভিন্নভাবে চাপ আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তৎকালীন সময়ে শ্রীমঙ্গল থানার বিতর্কিত ওসি মাহবুবুর রহমান সকলের সামনেই আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। তিনি শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং বিভিন্ন ধরণের মামলায় আমার নাম জড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমাকে নিয়ে ওসি সাহেবের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার তথ্য ঘনিষ্ঠ একজন পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে আমি জেনে যায়। তাৎক্ষণিক ফেসবুকে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাসে লিখি আমাকে একাধিক মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছে। এই স্ট্যাটাসের কয়েকদিন পরই আমাকে একাধিক মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দেন তিনি।  আমি ফেসবুকে পুনরায় স্ট্যাটাস দেই এবং লিখি অবশেষে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে আমাকে ষড়যন্ত্রমূলক একাধিক মিথ্যে মামলার প্রধান আসামি করা হলো।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে দেশ জুড়ে তুলপাড় শুরু হয়। পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে একের পর এক তদন্ত হয়।সারা বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ এবং সচেতন মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মিথ্যে ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার তীব্র ঘৃণা প্রকাশ প্রকাশ করে এবং এ মিথ্যে মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য দাবি তুলেন। প্রতিথযশা সাংবাদিক প্রবীর সিকদারও তার একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন অনতি বিলম্বে মৌলভীবাজারের তরুণ সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথের উপর হয়রানি ও মিথ্যে মামলা তুলে না নিলে আমি স্বশরীরে মৌলভীবাজারে এসে অনশন কর্মসূচির ডাক দেবো। এর কিছুদিনের মধ্যেই বিতর্কিত সেই ওসিকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।

আলোচিত সাংবাদিক নেতা এবং ক্রাইম রিপোর্টার্স সমবায় সমিতি ঢাকা’র সভাপতি, দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র অনুসন্ধানী প্রতিবেদক নেছারুল হক খোকন বলেন, মফস্বলে সাংবাদিকতা আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। কারণ মফস্বলে পেশী শক্তি এবং প্রভাবশালীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত এবং হয়রানি হওয়ার আশংকা থাকে এজন্য মফস্বলের অনেক সাংবাদিক অনেক কিছু দেখেও এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে এড়িয়ে চলে, লিখতে চান না। তবে এসব প্রতিবন্ধকতাকে পাস কাটিয়ে ঝুকি নিয়ে সাহস করে যারা লিখছেন আমার দৃষ্টিতে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন মৌলভীবাজারের সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ। ঝুঁকি নিয়ে সে দুঃসাহসী অনেক রিপোর্ট করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে মফস্বল সাংবাদিকতায় বর্তমান সময়ে তরুণ সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। মফস্বলে থেকে ঝুঁকি নিয়ে এসমস্ত সাহসী রিপোর্ট করাটা বেশ কঠিন। আমার বিশ্বাস হৃদয় দেবনাথ একসময় জাতীয় পর্যায়ে একটা জায়গা করে নিবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথের সকল কাজের প্রশংসা করি সেই সাথে তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।

যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি শান্তির দূত হিসেবে খ্যাত সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিম বলেন, মফস্বলে থেকেও সাংবাদিক হৃদয় যে সাহসী রিপোর্ট করে যাচ্ছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, আমি তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি।

কালের কণ্ঠের সিনিয়র অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হায়দার আলী বলেন,হৃদয় যে সৎ সাহস নিয়ে মফস্বলে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন তা প্রশংসনীয় আশা করি তাকে দেখে অন্যান্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার মির্জা মেহেদী তমাল বলেন,মফস্বলে ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকতা করে সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ যে পরিমান হয়রানি ও মিথ্যে মামলা সহ হামলার সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলার শিকার হয়েছেন তা খুব দুঃখজনক তবে হৃদয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এ কথা নিঃসন্দেহেই বলা যায়।

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক ও আইনজীবী এড.রাধাপদ দেব সজল সাংবাদিক হৃদয় সম্পর্কে বলেন, হৃদয় একজন সাহসী প্রতিবাদী সাংবাদিক। অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে যা সত্য তাই তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেন।

তার রিপোর্টের কারণে অনেক পুলিশ কর্মকতার বদলি এবং প্রত্যাহার হয়েছে। অবশ্য এজন্য অনেক হয়রানিমূলক মিথ্যে মামলার শিকারও হয়েছে সে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিটা হয়রানিমূলক মিথ্যে মামলার উকিলও আমি। সম্প্রতি মাদকের উপর অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের সময় তাকে মেরে ফেলারও চেষ্টা করা হয়েছে যদিও সৌভাগ্যজনকভাবে বেঁচে গেছে। নীতি-নৈতিকতা নিয়ে সাংবাদিকতা করে সে।সাংবাদিক হৃদয় প্রতিবাদী ও সাহসী প্রতিবেদন করার কারণে স্বল্প সময়েই সাংবাদিকতায় একটা স্থান দখল করে নিয়েছে হৃদয়।  

Bootstrap Image Preview