Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অনার্স-মাষ্টার্স কলেজের শিক্ষকদের বেতন ৩ হাজার টাকা!

আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৫০ AM
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১৫ PM

bdmorning Image Preview


বেসরকারি অনার্স-মাষ্টার্স কলেজে এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। মাত্র ৩ হাজার টাকা বেসরকারি অনার্স কলেজের শিক্ষকদের অনেকেরই বেতন! এভাবেই চাকুরি করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। মানুষ গড়ার এই কারিগররা শিক্ষার যুদ্ধে উত্তীর্ণ হলেও জীবনযুদ্ধে অনেকেই হেরে যান অর্থের কাছে, কিন্তু এই দুর্দশা যেন দেখার কেউ নেই।

বর্তমানে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৭শত কলেজে অনার্স-মাষ্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এসব কলেজগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৫ হাজার শিক্ষক ২৭ বছর যাবৎ এমপিও ভুক্তের আশায় বসে আছেন। মানবেতর জীবন যাপনের পরেও চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষাকার্যক্রম।

বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালে প্রণীত জনবল কাঠামো অনুযায়ী, প্রতিটি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অন্তত ১ জন এবং ডিগ্রী পর্যায়ে অন্তত ১ জন এমপিও ভুক্তি বিধান আছে।

কয়েক মাস আগেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির ১২তম ও ১৩তম সভায় সুপারিশ সংবলিত চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। সেখানে বলা হয়েছে বিবেচনা পূর্বক অনার্স পর্যায়ে বিষয়গুলোতে ৫ জন ও মাষ্টার্স পর্যায়ের বিষয়গুলোতে ২ জন করে শিক্ষক জনবল কাঠামোতে অন্তভুক্ত করে এমপিও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। কিন্তু আজও পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট করে এবং আদালত তাদের পক্ষেই রায় প্রদান করেন। হাইকোর্টও খুব দ্রুত সরকারকে অনার্স-মাষ্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অর্ন্তভুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।

তবে অনেক শিক্ষক আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে, আমরাদের বাদ দিয়ে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই এই  বিষয়টিকে আরো গুরুত্ব দেওয়া সরকারের উচিত।

অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন না করে বেসরকারি কলেজগুলোতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স-মাষ্টার্স কোর্স চালু করার অনুমতি দিচ্ছে। যাচাই বাছাই না করেই টাকার বিনিময়ে এসব কালেজে অনার্স কোর্স চালুর অনুমিত দিচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ কম নয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনার্স কোর্স চালুর অনুমতির সময় সেসব শর্ত দিয়ে কলেজগুলোকে অনুমতি দিয়েছিল সেগুলোর বেশিরভাগ শর্তই মানছে না। অনেক কলেজে আবার পর্যাপ্ত ফান্ডই নেই। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক নগন্য। ফলে ফাণ্ডের অভাবে শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন দিয়ে  এই কলেজগুলো এইসব কোর্স চালাচ্ছে। 

দেশে বেকারত্বের হারের কারণে বাধ্য হয়ে উচ্চশিক্ষিত অনেক যুবক এসব কলেজের শিক্ষক হোন। কোনো কোনো কলেজ শুধুমাত্র গাড়ি ভাড়াটা দিচ্ছে শিক্ষকদের। আবার যারা নিয়মিত চাকুরি করছেন  এইসব কলেজে, তারা বেতন বৃদ্ধির কথা মুখে আনলেই নানা রকম অপমান সহ্য করতে হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট।

কোন কোন কলেজে একজন অনার্সের শিক্ষককে নাম মাত্র ৩ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরাও অর্নাসের শিক্ষকদের অবহেলার চোখে দেখেন। কলেজের নানা অনুষ্ঠানেও ডাকেন না তাদের। অথচ যোগ্যতার বিচারে কোন অংশেই কেউ কম নয়।

এমপিও না থাকার কারণে অনেকেই পড়তে হচ্ছে সমাজিক অনেক প্রতিবন্ধকতায়। অনেকেরই চাকুরির বয়স চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই পড়ে রয়েছেন এইসব কলেজে। অনেকেই বেতন কম হওয়া সত্ত্বেও লেগে আছেন শুধুমাত্র জাতীয়করণের আশায়। কিন্তু হতাশা যেন কাটছে না তদের।

বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাষ্টার্স শিক্ষক সমিতি ঢাকায় বেশ কিছু দিন আন্দোলন চালিয়ে গেলেও আশার বানী শুনেননি। সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি নেকবর হোসেন অসুস্থ্য হয়ে বর্তমানে ভারতে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। তবে সরকারের কাছে সুবিধা বঞ্চিত এই শিক্ষকদের জোর দাবি, সরকার যেন তাদের বিষয়টি মানবিক দিক থেকে হলেও আমলে নেয়।

Bootstrap Image Preview