ভারতের আসাম রাজ্যের তিনসুকিয়ায় পাঁচ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০১ নভেম্বর) বিকেলে তাদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি চালানো হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
খবরে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আসামের সম্প্রতি নাগরিক তালিকা হালনাগাদ নিয়ে উত্তেজনার জের ধরে উলফা জঙ্গিরা এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে থেকে জানা গেছে, উলফার পক্ষ থেকে এই ঘটনার দায় স্বীকার করা হয়েছে। জানা গেছে, এদিন রাতে জঙ্গিরা ওই গ্রামে হানা দেয়। তাদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। ধোলা সাদিয়া সেতুর কাছে রাত আটটার দিকে পাঁচজনকে নাম ধরে ডেকে বাইরে নিয়ে আসে জঙ্গিরা। তার পর ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে নিয়ে গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করে।
নিহতরা হলেন- শ্যামলাল বিশ্বাস, অনন্ত বিশ্বাস, অবিনাশ বিশ্বাস, সুবোধ দাস ও ধনঞ্জয় নমশূদ্র। এর মধ্যে ৩জন একই পরিবারের সদস্য।
ঘটনার পর গোটা রাজ্যে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাঙালি ছাত্র ফ্রন্টের ডাকে তিনসুকিয়া জেলায় আজ পালিত হচ্ছে হরতাল।
ঘটনার নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানিয়েছে, দায়ী ব্যক্তিদের কঠোরহস্তে দমন করা হবে।
এর মধ্যে রাজ্যে সেনা ও পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য নেই।
বাঙালি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এমনকি আলোচনাপন্থী উলফা নেতারাও হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে যথাযথ তদন্তের দাবি করেছে।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাগরিকত্ব নিয়ে আসামে যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তার জেরেই এই হামলা কি-না সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
নিন্দা করেছে কংগ্রেসও। রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি রিপুন বরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এই হত্যাকাণ্ড সেটাই প্রমাণ করে।’
আসাম নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির নেতা সাধন পুরকায়স্থ বলেন, ‘বাঙালিদের হত্যালীলা শুরু হলো। আগেই অসমিয়ারা হুমকি দিয়েছিল। এখন শুরু হলো খুন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুয়াহাটির এক বাঙালি নেতা বলেন, ফের শুরু হলো বাঙালি নিধন। এর জন্য বিজেপিই দায়ী। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন, বাঙালিরা উইপোকা। এখন উইপোকা মারা শুরু হলো।
নিজেকে উলফার (স্বাধীন) মুখপাত্র বলে পরিচয় দিয়ে রুমেল নামের এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
তবে পুলিশের সন্দেহ, উলফার আলোচনা-বিরোধী স্বাধীন গোষ্ঠীই এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর গুয়াহাটিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাঙালিদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন উলফার সর্বাধিনায়ক পরেশ বড়ুয়া।