বিপুল পরিমাণ টাকা ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আটক চট্টগ্রামের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে (৪২) দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ জানিয়েছেন, রিমান্ডে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছে।
ওসি বলেন, রিমান্ডে সোহেল রানা জানিয়েছেন ওইদিনের জব্দকৃত ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকার মধ্যে ১২ লাখ টাকা ছিল চট্টগ্রাম কারাগারের ডিআইজি প্রিজন পার্থ কুমার বণিক ও সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের।
এ ছাড়া জব্দকৃত আড়াই কোটি টাকা ও ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক সম্পর্কে সোহেল রানা বলেছেন- টাকাগুলো কারাগারে মাদক ব্যবসাসহ অবৈধভাবে রোজগার করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কারাগারে অবৈধভাবে প্রতি মাসে আড়াই কোটি টাকা রোজগার হয়। এই টাকার অংশ হিসেবে মাসে ৪২ লাখ টাকা ভাগ পান সোহেল। বাকি দুই কোটি টাকা তার ঊর্ধ্বতন দুই বসকে দেয়া হয়। তবে ওই দুইজন ঊর্ধ্বতন বসের নাম বলেননি সোহেল।
কিভাবে কারাগারের ভেতর অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করেছেন এ বিষয়ে সোহেল পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদার অজিত নন্দির মাধ্যমে কাঁচা বাজারের সঙ্গে মাদক ঢুকিয়ে কারাগারের মাদকাসক্ত বন্দিদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হতো।
এ ছাড়া বন্দিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো, কারাগারে ভালো রুমে কম বন্দিদের সঙ্গে আরামে রাখা, রিমান্ডের আসামিকে কষ্ট না দিয়ে ভালোভাবে রাখা, দীর্ঘদিন সাজাপ্রাপ্ত ও কয়েদিদের স্ত্রীর সঙ্গে রাতযাপনের সুযোগ করে দেয়া, বেশি টাকা দিলে হাসপাতালে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হতো।
শুধু এসব দুর্নীতিই হতো না। সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের বিনাশ্রমে রাখা, বিনাশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের অপরিচ্ছন্ন কাজ করানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, কারাগারে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, স্থানীয় বন্দিদের দূরের কারাগারে স্থানান্তরের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, এমনকি খারাপ বন্দিদের দিয়ে ভালো বন্দিদের প্রতিদিন নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হতো।
জবানবন্দীতে তিনি আরও বলেন, কারারক্ষী আনোয়ারের নেতৃত্বে ৮ জন কারারক্ষী এবং কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন। অবৈধভাবে এসব টাকা রোজগারের বিষয়টি দুই জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানতেন। প্রতিমাসে অবৈধ আয়ের টাকা পরের মাসের ৫ তারিখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা হতো।
এর আগে সোহেল রানাকে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল মাহমুদ দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামির বিরুদ্ধে ভৈরব জিআরপি থানায় মানি লন্ডারিং ও মাদকের পৃথক দুইটি মামলা করা হয়।