Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আশপাশে ৬টি মসজিদ আছে, এখানে আর মসজিদের দরকারই নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৩ PM
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৩ PM

bdmorning Image Preview


পুরান ঢাকার বকশিবাজারের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার খেলার মাঠ রক্ষায় রাস্তায় নেমেছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।

অভিযোগ আছে,ওই মাঠে মডেল মসজিদ নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগকে মাঠ দখলের চক্রান্ত বলছে এলাকাবাসী।

তারা বলছে, আশেপাশে ছয়টি মসজিদ থাকায় নতুন মসজিদের দরকার নেই। কিন্তু এই মাঠটি এলাকার শিশু কিশোরদের খেলাধূলার জন্য দরকার। আবার মাঠের মালিকানাও মাদ্রাসার বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারাও চাইছে মাঠটি তাদের দখলেই থাক। ওদিকে কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, মাঠের মালিকানা তাদের। যদিও ১১ বছর আগে মাঠটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে ‘বকশিবাজার মাঠ রক্ষা কমিটির ব্যানারে’ রাস্তায় নামে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।

সকাল দশটা থেকে দুইঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি আলিয়া মাদ্রাসা, ড. শহিদুল্লাহ কলেজ, নবকুমার ইনস্টিটিউশন, তিব্বিয়া হাবিবীয়া কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।

আয়োজক সংগঠনের সদস্য শাহদাত হোসেনের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ আলিয়া মাদরাসার মাঠটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য চক্রান্ত করছে। এর আগে মাদ্রাসা মাঠটি তারা নিজেদের দাবি করে এলেও এখন সেখানে মসজিদ নির্মাণ করার কথা বলছে কারা কর্তৃপক্ষ।

বক্তারা বলেন, পুরান ঢাকায় এটি ছাড়া খেলাধুলার জন্য কোনো মাঠ নেই। সকালে এবং বিকালে বকশিবাজার, হোসনি দালান, খাজে দেওয়ান, লালবাগ, চকবাজার এলাকার শিক্ষার্থী ও ক্রীড়ামোদী মানুষ এখানেই খেলাধুলা করে। মাঠটি সবার জন্য উম্মুক্ত থাকায় বিনা বাধায় বিভিন্ন সময় ক্রিকেট, ফুটবলের টুর্নামেন্টও অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এছাড়াও আশপাশের অনেক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করার জন্যও আলিয়া মাদ্রাসার মাঠটি ব্যবহার করা হয়। এর বাইরেও দুই ঈদের জামাত, এলাকার মানুষের জানাজার নামাজের জন্যও মাঠটি ব্যবহার করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মাঠটি কারা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে এলাকার মানুষ খেলাধুলা করার মতো কোনো সুযোগ পাবে না। মাঠটি যেন সবার জন্য আগের মতো উম্মুক্ত থাকে সেই দাবিও তাদের।

‘এই মাঠ আলিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্য, কারাগারের চক্রান্তে এটি হারাতে চাই না’; ‘মাঠকে রক্ষা করো, শিক্ষা জীবন স্বাভাবিক করো’ ‘মসজিদের দোহাই দিয়ে লক্ষ রাসেল মাঠ ছাড়া’; ‘মাঠ নিয়ে ষড়যন্ত্র মানি না, মানবো না’ - এই ধরনের স্লোগান লেখা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে যোগ দেয় শিক্ষার্থীরা।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা ইয়াসিন আহমেদ সুমন নামের একজন মানবাধিকার কর্মী বলেন, জন্মের পর থেকে আমরা জানি এই মাঠ আলিয়া মাদ্রাসার। এখানে আমাদের আগের প্রজন্ম, আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের ছেলে সন্তানরাও খেলাধুলা করছে। কিন্তু হঠাৎ করে এই মাঠটি কারা কর্তৃপক্ষ নিজেদের বলে দাবি করছে। এটা কোনো ভাবে মেনে নেয়া যাবে না। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে মাঠ রক্ষা করব।

খাজে দেওয়ানের স্থানীয় যুবলীগ নেতা জসীম উদ্দিন মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বলেন,এই মাঠে খেলাধুলা করে ফুটবল, ক্রিকেটের অনেক জাতীয় খেলোয়াড় তৈরি হয়েছেন। এলাকার ছাত্ররা এই মাঠে খেলাধুলা করে। অনেক সংগঠন টুর্নামেন্টের জন্যও মাঠটি ব্যবহার করেন। কিন্তু মাঠ না থাকলে এরা কোথায় যাবে?

মাঠে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জসীম বলেন,বকশিবাজারসহ আশপাশে প্রায় ছয়টি মসজিদ আছে। এখানে আর মসজিদের কোনো দরকারই নেই। এটা কারা কর্তৃপক্ষের একটা ষড়যন্ত্র। আমরা এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না। আলিয়া মাদ্রাসা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাগর আহমেদ শাহীন বলেন, এই মাঠ আলিয়া মাদ্রাসার। কোনোভাবেই মাঠ কাউকে দখল করার সুযোগ দেয়া হবে না। মাঠ রক্ষায় প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

মাঠে মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (সদর দপ্তর) বজলুর রশিদ বলেন, এই মাঠের দলিল আমাদের নামে। আমরা খাজনা পরিশোধ করেছি। মাঝে মাঝে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা খেলাধূলা করতে আসত, তাই আমরা আপত্তি করতাম না। এখন তারা এটা নিজেদের বলে দাবি করছে।

২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে মাদ্রাসা অধ্যক্ষেকে দেয়া কারা অধিদপ্তরের একটি চিঠিতে দেখা গেছে, সেই সময়ের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. শামসুল হায়দার সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত চিঠিতে মাঠটি ব্যবহারে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বজলুর রশিদ বলেন,এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা জানতে পেরেছি আমাদের একজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে তারা একটি চিঠি করেছে। এ কারণে তাদের শোকজও করেছি। রবিবারের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে তাদের।

তবে আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন, কারা কর্তৃপক্ষকে মাঠের বিষয় নিয়ে চিঠি দিয়েছি। ৫৫ বছর যাবত মাঠটি আলিয়া মাদ্রাসা ভোগদখল করে আসছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন সময় তারা আমাদের মাঠটি ব্যবহারের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অনুমতি মাঠটি ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এখন হঠাৎ করে তারা এই মাঠ কারাগারের বলে দাবি করছে।

Bootstrap Image Preview