Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঋণের চাপ সইতে না পেরে নারী শ্রমিকের আত্মহত্যা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৫৬ PM
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৫৬ PM

bdmorning Image Preview


সিলেট প্রতিনিধিঃ

বেসরকারি এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের ঋণের চাপ সইতে না পেরে হতদরিদ্র ফিরোজা খাতুন (৩৮) নামের এক নারী পাথর শ্রমিক গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ওই নারী শ্রমিকের লাশ উদ্ধারের পর থানা পুলিশ জেলা সদর মর্গে পাঠিয়েছে। নিহত গৃহবধূ উপজেলার বড়দল (উওর) ইউনিয়নের মাণিগাঁও গ্রামের দিনমজুর আবুল কাসেমের স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তানের জননী।

নিহত গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের তাহিরপুরের বাদাঘাট শাখা থেকে গৃহনির্মাণের জন্য চলতি বছরের ১২ মার্চ ফিরোজা খাতুন ২৫ (পচিশ) হাজার টাকা ঋণ উক্তোলন করেন। ৪৫ কিস্তিতে ৭৫ টাকা সঞ্চয় ও ৬২৫ টাকা ঋণের কিস্তিসহ সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ৭’শত টাকা হারে কিস্তি পরিশোধের শর্তে ওই ঋণ প্রদান করা হয়।

এদিকে নদীতে পাথর পরিবহনের কাজ না  গত কয়েক সপ্তাহ’র কিস্তি পরিশোধ করতে পারেছিলেন না ফিরোজা।

অপরদিকে, তাহিরপুরের ব্র্যাক বাদাঘাট শাখার ফিল্ড অর্গানাইজার গত বৃহস্পতিবার ফিরোজার বাড়ি গিয়ে এক সাথে তিন সপ্তাহের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে সোমবার বিকেল পর্য্যন্ত সময় বেধে দিয়ে কিস্তি পরিশোধে ব্যার্থ হলে স্বামীসহ ফিরোজাকে হাত-পা বেধে অফিসে নিয়ে আসবেন বলে হুমকি দিয়ে আসেন।

সোমবার বিকেলে ব্র্যাকের সুনামগঞ্জ রিজিওনের বিশ্বম্ভরপুর এরিয়া অফিসের আওতাধীন বাদাঘাট শাখার শাখা ব্যবস্থাপক বিষ্ণু কুমার বিশ্বাস, ফিল্ড অর্গানাইজার গাজিউর রহমান অপর ফিল্ড অর্গানাইজার নায়েব আলী ফিরোজার বাড়িতে যান কিস্তি আদায় করতে। কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে না পেয়ে ভয়ে বাড়ি ছেড়ে ফিরোজা অন্যত্র চলে যাান।

এক পর্যায়ে ফিরোজা রাত অবধি বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবার ও গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী বড়টেক এলাকায় একটি পতিত ঘরের আড়ার সাথে গলায় রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ফিরোজার লাশ দেখতে পান।

নিহত ফিরোজার স্বামী আবুল কাসেম মঙ্গলবার বিকেলে অভিযোগ করে বলেন, ব্র্যাকের কিস্তি আদায়ে ফিল্ড অর্গানাইজার গাজিউর রহমান আমার স্ত্রীকে গালি গালাজ ও হুমকি ধামকি দিয়েছেন।’ মুলত এ কারনেই  ভয়ে ও অপমাণ সইতে না পেরে আমার স্ত্রী আত্বহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।

তাহিরপুরের ব্র্যাকের বাদাঘাট শাখার ফিল্ড অর্গানাইজার গাজিউর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, বেশ কয়েকটি কিস্তি বকেয়া থাকায় এরিয়া ম্যানেজারের চাপে ফিরোজাকে কিস্তি পরিশোধে সোমবার পর্য্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু ওইদিন বিকেলে গিয়ে তাকে বাড়িতেই পাইনি। কিস্তি আদায়ের চাপ প্রয়োগ, হুমকি ও ফিরোজাকে গালিগালাজের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

তাহিরপুরের ব্র্যাকের বাদাঘাট শাখা ব্যবস্থাপক বিষ্ণু কুমার বিশ্বাস বলেন, সোমবার বিকেলে কিস্তি আদায়ের জন্য আমি ও অপর দুই ফিল্ড অর্গাইজারকে সাথে নিয়ে ফিরোজার বাড়ি গিয়েছিলাম, তাকে পাইনি, পরে আমরা ফিরে আসি। কিস্তি আদায়ে চাপ প্রয়োগ, গালি-গালাজ ও হুমকি প্রদানের বিষয়টি তিনি জানেন না বলেও জানান তিনি।

উপজেলার বড়দল (উওর) ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নোয়াজ আলী বলেন, কিস্তি বকেয়া থাকলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গকে জানালে বিষয়টি সুরাহা করা যেত। কিন্তু ব্র্যাকের লোকজন গালি-গালাজ, হুমকি প্রদান ও চাপ প্রয়োগ করায় মূলত ব্র্যাকের লোকজনই ফিরোজাকে আত্বহত্যার প্ররোচনায় বাধ্য করেছেন।

তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর বলেন, নিহতের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ব্র্যাকের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরেই ওই নারী শ্রমিক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।

Bootstrap Image Preview