Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অবৈধ টাকার খনি চট্টগ্রাম কারাগার, দশ মাসেই কোটিপতি সোহেল

বিডিমর্নিং ডেস্ক-
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০১ PM
আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০১ PM

bdmorning Image Preview


সোহেল রানা বিশ্বাস ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার হিসেবে যোগ দেন। সে হিসাবে মাত্র দশ মাস আগে নরসিংদী কারাগার থেকে বদলি হয়ে আসা সোহেল রানা এখন কোটিপতি!

গত শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) নগদ ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং প্রায় পাঁচ কোটি টাকার নথিপত্রসহ ভৈরব রেলওয়ে পুলিশের হাতে আটক হন জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। ওই ঘটনায় ভৈরব থানার এসআই আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে শনিবার বিকেলে মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে সোহেল রানার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন।

সোমবার সকালে আদালতে হাজির করে তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। দুপুরে শুনানি শেষে কিশোরগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল মাহমুদ দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশের কাছে সোহেল রানা দাবি করেছেন, এসব টাকার সবটাই তার নয়, এতে ভাগ রয়েছে তারই দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার। যা আগামী ১ নভেম্বর ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলার সম্মেলনে ভাগ-বাটোয়ারার কথা ছিল। স্বভাবতই সাধারণের মনে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি চট্টগ্রাম কারাগার টাকার গাছ!

কারা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী কয়েদি ও হাজতিদের খাবার সরবরাহ, স্বজনদের সাক্ষাৎ, আমদানি ওয়ার্ডে বন্দী বিক্রি, মেডিকেলে অসুস্থের জায়গায় সুস্থদের রাখাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিময় হচ্ছে কোটি টাকার ঘুষ। বন্দীদের সংশোধন করতে কারাগার দেয়া হলেও সেটি এখন হয়ে উঠেছে টাকার গাছ। এমন পরিবেশে দশ মাস চাকরি করে কোটিপতি বনে গেছেন জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। তাকে ম্যানেজ করেই ঠিকাদাররা বন্দীদের সরবরাহ করতেন পরিমাণে কম ও নিম্নমানের খাবার। সোহেল রানাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জোগসাজশেই বছরের পর বছর ঘুরেফিরে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে কারাগারে এ খাবার সরবরাহের কাজ।

রেলওয়ে পুলিশের ভৈরব থানার ওসি আবদুল মজিদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে নগদ ৪৪ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। তার কাছ থেকে তিন ঠিকাদারের প্রায় দেড় কোটি টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। এছাড়া দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচটি চেক বই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ১২ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়।’

তিনি আরও জানান, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর ঘেঁটে দেখা গেছে, এর মধ্যে এক কোটি টাকা সোহেল রানার নামে। এক কোটি আছে স্ত্রী হোসনে আরা পপির নামে। বাকি ৫০ লাখ টাকা শ্যালক রাকিবুল হাসানের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকে। চেকে দেয়া এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ছিল সোহেল রানার নামে। যা তিনি ঘুষের টাকার চেক বলে স্বীকার করেছেন। চেকের টাকা উত্তোলনের তারিখ ছিল রবিববার (২৮ অক্টোবর)। জব্দ চেক বইগুলো সোনালী, প্রিমিয়ার, সাউথইস্ট, মার্কেন্টাইল ও ব্র্যাক ব্যাংকের।

বিপুল অর্থসহ আটকের পরপরই পুলিশের কাছে জেলার সোহেল রানা দাবি করেন, জব্দ করা টাকার মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা তার। বাকি ৩৯ লাখ টাকা কারা বিভাগের চট্টগ্রাম জোনের ডিআইজি পার্থ কুমার বণিক এবং চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের। ১ নভেম্বর ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে জেলারদের সম্মেলন হবে। ওই সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগে তিনি পাঁচদিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। ওই দুই কর্মকর্তা চট্টগ্রামেই থাকেন। সর্বশেষ দুই মাসের মাসোহারা তার কাছ থেকে চট্টগ্রামে না নিয়ে ঢাকায় গিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তারা।

তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি প্রিজন পার্থ কুমার বণিক বলেন, ‘সোহেল রানার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অনেক অভিযোগ আছে। তিনি একজন মাদকাসক্ত। আমরা মৌখিকভাবে বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ছিলাম। এখন নিজের পিঠ বাঁচাতে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।’

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকও।

Bootstrap Image Preview