Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আমি কেন হিন্দু নই’, বই বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৭ PM
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঠ্যক্রম থেকে কয়েকটি ‘হিন্দুত্ববিরোধী’ বই বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বইয়েরই রচয়িতা দলিত চিন্তাবিদ কাঞ্ছা ইলাইয়া। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে তার লেখা ‘হোয়াই আই অ্যাম নট এ হিন্দু’ বইটিও।

বিবিসির অনলাইন বাংলা সংস্করণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তাদের পাঠ্যক্রম নতুনভাবে তৈরি করতে চলেছে। তারই অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এমএ ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের পড়তে বলা হয়- এমন চারটি বই তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়।

বইগুলোর মধ্যে রয়েছে দলিত লেখক অধ্যাপক কাঞ্ছা ইলাইয়ার লেখা তিনটি বই ‘হোয়াই আই অ্যাম নট এ হিন্দু’, ‘বুদ্ধিজম : চ্যালেঞ্জ টু ব্রাহ্মিনিজম’ এবং ‘পোস্ট হিন্দু ইন্ডিয়া’। এ ছাড়াও ক্রিস্টোফার জেফারলেটের লেখা ‘মিলিশিয়াজ অব হিন্দুত্ব’ বইটিকেও পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যাকাডেমিক ম্যাটার্স-এর বৈঠকেই ওই চারটি বই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কয়েকজন সদস্য। ওই কমিটির সদস্য অধ্যাপক গীতা ভাট বিবিসিকে বলেছিলেন, কেন তারা এই চারটি বইকে বাদ দিতে চাইছেন।

ভাটের ভাষায়, ‘বইগুলো নিয়ে আপত্তির মূল কারণ হলো এগুলোর মধ্যে যথেষ্ট গবেষণালব্ধ উপাদান নেই, তথ্যেরও অভাব রয়েছে। এই বইগুলো ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোটা অ্যাকাডেমিক দিক থেকে বিচার করলে অনুচিত। তাদের মধ্যে ভেদাভেদের মনোভাব তৈরি হবে।’

তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘হোয়াই আই অ্যাম নট এ হিন্দু’ বইটিতে কাঞ্ছা ইলাইয়া লিখেছেন- ‘গেরুয়া ঝান্ডা আর কপালে তিলক আমার কাছে পীড়াদায়ক’, কোথাও লিখেছেন–‘হিন্দুত্ববাদী শক্তি মুসলমান আর খ্রীস্টানদের ঘৃণা করে’।

অধ্যাপক গীতা ভাট মনে করেন, এগুলো কাঞ্ছা ইলাইয়ার নিজের মতামত -এগুলো লেখার পেছনে কোনো যুক্তি বা গবেষণালব্ধ জ্ঞান নেই।

তবে এ বিষয়ে অধ্যাপক কাঞ্ছা ইলাইয়ার বক্তব্য হলো: ‘আমার ওইসব বইগুলো যে শুধু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকদিন ধরে পড়ানো হচ্ছে- তা নয়। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় জেএনইউ থেকে শুরু করে অনেক নামীদামি পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়তেও এগুলো পড়ানো হয়। বইগুলোতে আসলে ‘বিজেপি-আরএসএসের দর্শন’কে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে, সেইজন্যই এখন তার বইগুলোকে পাঠক্রম থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে। মতামতের বহুত্ব না থাক, সেটাই চায় বিজেপি।’

বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যে শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের মত চালাতে চাইছে তারা, সেই বিষয়টিই তুলে ধরেছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়।

তার কথায়, ‘যেকোনো ধরনের মতামত প্রকাশের আর সেগুলো পড়ার স্বাধীনতার নামই তো গণতন্ত্র। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কেন কোনো বিশেষ বই বাতিল করবে? গত ৫০ বছরে এ ঘটনা কখনও হয়নি, যা এখন শুরু হয়েছে বিজেপি আসার পর থেকে। তারা সবক্ষেত্রে সেইসব লোক বেছে বেছে নিয়োগ করছে, যারা তাদের হিন্দুত্ববাদের স্বপক্ষে সওয়াল করবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, অবাঞ্ছনীয়।’

অবশ্য অধ্যাপক গীতা ভাট এবং ওই কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক হংসরাজ সুমন এইসব অভিযোগ খণ্ডন করেছেন। তারা দুজনেই বলেছেন যে, ওই কয়েকটি বই পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়ার জন্য বাইরে থেকে কোনো চাপ আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা- তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই ব্যাপারে।

Bootstrap Image Preview