ঢাকাই চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ রেহানা জলি। প্রায় ৪০০ ছবিতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ফুসফুসে সংক্রমণ ও মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়ের কারণে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন তিনি। তবে পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই হাসপাতাল ছাড়তে হয়েছে। টাকার অভাবে নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না এই অভিনেত্রী।
এ প্রসঙ্গে রেহানা জলি বলেন, ‘গত এক বছর আগে আমার মা মারা যান। তারপর থেকেই আমি অসুস্থ। প্রথমে বুঝতে পারিনি। তারপর চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেখি আমার ফুসফুসে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। মেরুদণ্ডের একটি হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। টানা সাত মাস ধরেই চিকিৎসা নিয়েছি। তিন মাস ধরে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেলেও টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছি না।’
সংসারের ঘানি টানতে টানতে রেহানা জলি কোন অর্থ সঞ্চয় করতে পারেননি। তাই যখন তার অর্থের প্রয়োজন তখন তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাবা মারা যান ১৯৮৩ সালে। আমরা চার বোন আর এক ভাই। আমি সবার বড়। ভাইটি ছোটবেলায় মারা গেছেন। মাত্র বারো বছর বয়স থেকেই চার বোন আর মায়ের দায়িত্ব নিতে হয়েছে আমাকে। তারপর থেকেই কাজ করে যাচ্ছি সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে। বিয়েটা পর্যন্ত করার চিন্তা করতে পারিনি। যা টাকা কামিয়েছি তার সব পরিবারের জন্যই খরচ করেছি। এখনো আমরা চারবোন এক সঙ্গে এক বাড়িতে থাকি।’
নিজের দুরাবস্থার কথা বলতে গিয়ে জলি আরো বলেন, ‘আমার বোনগুলো আমার মায়ের মতো। আমরা একে অপরের জন্য জীবন দিতে পারি। আমার বোনদের ব্যাংকে যে টাকা ছিল তার সব শেষ। এমনকি যে গহনা ছিল তাও বিক্রি করেছে। এখন আর কিছু আমাদের নেই যা বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে পারি। বোনদের সেবা আর ভালোবাসায় আমি এখনো বেঁচে আছি। প্রতি সপ্তাহে ডাক্তারের পরীক্ষা আর ওষুধ মিলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাসে প্রায় দুই লাখ টাকার বিষয়। যতটুকু পেরেছি চিকিৎসা করেছি। এখন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শুধু ওষুধ খাচ্ছি।’
নিজের বড় বোনের এই দুরাবস্থার কথা বলতে গিয়ে রেহানা জলির ছোট বোন লাইজু আক্তার বলেন,‘শিল্পী হিসেবে দেশের মানুষ তাঁকে সম্মান করে। অথচ এখন টাকার অভাবে তিনি মারা যাচ্ছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই। আমার এই বোন আমাদের বড় করেছেন মায়ের মতো করেই। উনি নিজেও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একজন মাকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় এগিয়ে আসবেন।’
প্রসঙ্গত, ১৪ বছর বয়সে ‘মা ও ছেলে’ ছবিতে মায়ের চরিত্র দিয়ে অভিনয় শুরু করেন রেহানা জলি। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির অভিনয়ের জন্য ১৯৮৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি ৩৫টি ছবিতে নায়িকা হিসেবেও অভিনয় করেছেন রেহানা জলি।