আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) চালু হলে রাজ্যজুড়ে বিদেশি তাড়ানোর অভিযান শুরু হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে হাড়দহ গ্রামের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। তারা দিনে দিনে শিবির ছাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ পরিবারটি গতকাল বৃহস্পতিবার শিবির থেকে পালিয়ে যায়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারইপুর থানার হাড়দহ গ্রামে গড়ে তোলা রোহিঙ্গা শিবিরে গত ডিসেম্বরে প্রথমে শিবিরে ঠাঁই দেওয়া হয় ২১ জন রোহিঙ্গাকে। তাঁদের মধ্যে ছিল ছয়জন পুরুষ, ছয়জন নারী ও নয়জন শিশু। পরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬০ জনে। স্থানীয় যুবক হোসেন গাজি তাঁর নিজের জমিতে গড়েন এ শিবির। পরে শিবিরে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও মুসলিম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা হোসেন গাজি বলেন, শিবিরের রোহিঙ্গারা এনআরসি নিয়ে আতঙ্কিত ছিল। মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে তাদের জেরা করায় তারা ভীত ছিল। এরপর তারা ধীরে ধীরে শিবির ছেড়ে পালাতে থাকে। শিবিরের শেষ পরিবারটি গতকাল পালিয়ে যায়। তবে তারা কোথায় গেছে, সে ব্যাপারে কিছু বলেনি হোসেন গাজি। হোসেন গাজি মনে করছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মুতে রোহিঙ্গাদের যে শিবির গড়ে উঠেছে, সেখানে হয়তো তারা পালিয়ে গেছে।
হোসেন গাজি বলেন, মানবিকতার কথা ভেবে তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। প্রায় ৭ লাখ রুপি খরচ করেছেন রোহিঙ্গাদের জন্য। সাহায্যের জন্য তিনি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সাহায্য মেলেনি।
স্থানীয় জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা সাংবাদিকদের বলেন, শরণার্থী পরিচয় দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা হাড়দহ গ্রামের আশ্রয়শিবিরে ছিল। কিছুদিন আগে সেখান থেকে কিছু রোহিঙ্গা চলে যায়। সব পরিবার শিবির ছেড়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ নিচ্ছেন।
শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন কলকাতার মাইনরিটি ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মহম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রাণভয়ে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাংলা ছেড়ে পালিয়ে গেল। এ খবরে সত্যিই তাঁরা ব্যথিত।