Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কলাবাগান মণ্ডপের ইতিকথা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৫৪ PM
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৫৭ PM

bdmorning Image Preview


ঢাকার ২০০ টি পূজা মণ্ডপের ভেতর সবচেয়ে আমেজপূর্ণ মণ্ডপের একটি হল কলাবাগান মণ্ডপে। প্রতিবছর শারদীয় পূজার পাশাপাশি এখানে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আরতি প্রতিযোগিতার। তবে অনেকেই জানেনা এই মণ্ডপ জন্মের ইতিহাস।

ধানমণ্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গীতা রানী সরকার। তিনি বলেন, ১২ বছর পূর্বে এর যাত্রা শুরু হয় এক অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে।

গীতা ছিলেন একজন জেলা পরজায়ের অ্যাথলেট। ধর্মীয় কার্যক্রমের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিলো না বললেই চলে। হঠাৎ করেই প্রতি বছর দুর্গা পূজার ঠিক আগে তিনি দেখতে শুরু করলেন উদ্ভট সব স্বপ্ন। স্বপ্নে দেখলেন, নদী ভেতর থেকে দুর্গা প্রতিমার একটি কাঠামো উঠছে।

ধানমণ্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের বর্তমান আহ্বায়ক স্বামী শ্রী তপন কান্তি সরকারকে জানালেন ঘটনাটি কিন্তু সাংসারিক দায়বদ্ধতা এবং আর্থিক সংকটের কারনে পারেননি বেশি কিছু। প্রনব মঠে প্রতিমার মাটি কেনার জন্য মাত্র আট হাজার টাকা দিয়ে নিজের মনকে সান্তনা দিতে হয়েছিল তাকে। পরের বছরও দেখলেন একই স্বপ্ন। ভরকে গেলেন গীতা।

পরিকল্পনা করলেন, চট্টগ্রামে নিজের বাড়িতে অল্প খরচে পুরো একটি পূজার আয়োজন করবেন তিনি। কিন্তু নানা আর্থ-সামাজিক কারনে তা হয়ে ওঠে নি। তৃতীয় বছর স্বপ্নে দেখলেন লাল শাড়ি পরা পরিপূর্ণ একটি দুর্গা প্রতিমা। বুঝতে পারলেন, এই স্বপ্নের আছে বিশেষ কোন তাৎপর্য। তখন নিয়মিত লেকের পাড়ে হাটতে আসতেন তিনি। কি করবে ভেবে না পেয়ে দশমীর দিন, দুপুরে রবীন্দ্র সরোবরের বেলগাছ থেকে একটি বেল পাতা ছিড়ে, তাতে সিঁদুর দিয়ে ত্রিনয়নী একিয়েই প্রতিমা বিসর্জন দিলেন সেই বার। এই ঘটনার ভেতর দিয়ে তিনি পেলেন এক আত্মিক প্রশান্তি। প্রতিজ্ঞা করলেন আরও তৎপর পদক্ষেপ গ্রহন করার।

২০০৫ সালে, ধানমণ্ডি এলাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্‌কন) এর সদস্যদের নিয়ে একটি নগরকীর্তনের আয়োজন করলেন তিনি। এই আয়জনের মধ্যে দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সার্থক হন তিনি।

অবশেষে, ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগের খালেদা বেগমের সহায়তায়, শতরূপা জুয়েলার্স এর মালিক চিত্ত পাল, বিক্রমপুর সুইটস এর মালিক স্বপন ঘোষের আর্থিক সহযোগিতায় ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনসাধারণের অনুদানের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ওই বছর প্রথম কলাবাগান মাঠে পূজার আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে জানান গীতা।

সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুশৃঙ্খলার জন্য যোগাযোগ করেছেন আরও অনেকের সাথেই। বর্তমানে ধানমণ্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ ২৫০ জন সদস্যের একটি সংগঠন। দুই বছর অন্তর অন্তর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্য পরিষদ গঠন করা হয়। তাদের আছে নিজস্ব ম্যাগাজিন,ধর্মীয় শিক্ষা কর্সুচ, শিক্ষা বৃত্তি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য হিতৈষী আরও অনেক কার্যক্রমও।

এই প্রসঙ্গে শ্রী তপন কান্তি সরকার বলেন, "আমাদের ধর্মে ব্রাহ্মণ যখন পূজা করতে বসেন, তখন মাটিতে জল দিয়ে এক ধরনের বর্গক্ষেত্র তৈরি করে। ঠিক তেমনি ধানমণ্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ সকল স্তরের হিন্দুদের জন্য একটি উন্নয়নের ক্ষেত্র। কমিটির সকল সদস্যের সহায়তায় আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবছর শারদীয় উৎসবের আয়োজন করি"

Bootstrap Image Preview