জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মার্ক লোকক সতর্ক করে বলেছেন, ইয়েমেন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যা বেঁচে থাকার জন্য পুরোপুরি মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। খবর আল জাজিরার।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মার্ক লোকক এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের একটি দুর্ভিক্ষ ইয়েমেনকে গ্রাস করতে যাচ্ছে এটা স্পষ্ট। বর্তমানে এটিই সবচেয়ে ভয়ের কারণ।’
জাতিসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী পর্ষদকে তিনি আরও জানান, এই দুর্ভিক্ষের প্রভাব এত বিশাল হবে যে, যারা এই ক্ষেত্রে কাজ করেছে তাদের জীবদ্দশায় এমন দুর্ভিক্ষ আর কেউ দেখেনি।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন অনেক ভয়াবহ হচ্ছে। ২০১৭ সালের শুরুতে একবার এবং গত বছরের নভেম্বরে আরও একবার ইয়েমেন দুর্ভিক্ষের বিষয়ে বিশ্ব পরিচালনা পর্ষদ সতর্ক করেছিল। কারণ এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঝুঁকিতে আছে।’
লোককের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে আনুমানিক এক কোটি ১০ লাখ ইয়েমেনি নাগরিক খুব দ্রুত ‘দুর্ভিক্ষ পূর্ব পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বলে বলা হয়েছিল। তবে প্রকৃত সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪০ লাখে। যা ইয়েমেনের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা।
লোকক বলেছেন, গত মাসে ইয়েমেনের প্রধান বন্দর নগরী হুদাইদায় যুদ্ধের তীব্রতা শুরু হলে প্রচণ্ড খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়।
তিনি বলেন, ‘হুদাইদায় ভয়াবহ যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। গত বেশ কয়েক দিন ধরে বন্দর নগরীটিতে তীব্র যুদ্ধ, মর্টার ও বিমান হামলা চলছে।’
‘ইয়েমেন সম্পূর্ণভাবে খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। দেশটিতে বৈদেশিক লেনদেন নির্ভর করে তেল রপ্তানি করে প্রাপ্ত সামান্য অর্থ, প্রবাসী ইয়েমেনিদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর। এই অর্থ দেশটির জনগণদের জন্য খাবার আমদানির জন্য এই অর্থ খুবই কম।’
১৩ জুন থেকে সৌদি-আমিরাত নেতৃত্বাধীন জোট হুদাইদা বন্দরের দখল নিতে তীব্র হামলা শুরু করে। এরপর থেকে শহরটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
২০১৪ সাল থেকে হুদাইদাসহ ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য উপকূলীয় শহর হুতি বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়।
ইয়েমেনের মোট আমদানি পণ্যের ৭০ শতাংশ পণ্য আসে হুদাইদা বন্দরের মাধ্যমে। এরমধ্যে অধিকাংশ মানবিক সাহায্য, খাদ্য সামগ্রী এবং জ্বালানি।
সৌদির অভিযোগ, হুতি বিদ্রোহীরা প্রতি মাসে তিন থেকে চার কোটি ডলার রাজস্ব আয় করছে এই বন্দর ব্যবহার করে। তারা ইরান থেকে অস্ত্র চোরাচালান করে নিয়ে আসছে।
২০১৭ সালের শুরু থেকে জাতিসংঘ ও তাদের অংশীদাররা ইয়েমেনে ৩০ লাখ ক্ষুধার্তদের খাদ্য সরবরাহ করতে পেরেছে। তারপর থেকে সহযোগিতা আরও বাড়ানো হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ৮০ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হয় দাতা দেশগুলোর উদার সহযোগিতার জন্য। লোকক জানান, এখন এক কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করতে তিনটি বিষয় প্রয়োজন। সেগুলো হলো- এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে একজন তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে, পাঁচ বছরের নিচে ৩০ শতাংশ শিশুর মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে দিনে অন্তত দুজন মারা গেলে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেছেন, ইয়েমেন জুড়ে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয়ের জন্য পর্যালোচনা চলছে। আগামী নভেম্বরে মাঝামাঝি প্রাথমিক ফলাফল জানা যাবে।
আরব দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়েমেন। ২০১৪ সালে হুতি বিদ্রোহীরা দেশটির রাজধানী সানা দখলে নিলে যুদ্ধ শুরু হয়। তারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদিকে উৎখাত করেন।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টের পক্ষে যুদ্ধ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার বেসামরিক নাগরিক এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। যুদ্ধের কারণে দেশটিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ও কলেরা দেখা দিয়েছে।