Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভারতের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহতদের রক্তদানে এগিয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:১৭ PM
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:১৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


‘জঙ্গি কারা বুঝুক দেশ! দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম তথা সামাজিক মাধ্যমগুলিতে প্রায় সময়ই মাদ্রাসগুলির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হয়ে থাকে। কখনও বলা হয় সমাজবিরোধী কাজ কারবার হয় এই মাদ্রাসায়, আবার কখনও জঙ্গি তৈরির কারখানা উপাধি দিয়ে দেওয়া হয় চোখবুজে। কিন্তু পাঞ্জাবের অমৃতসরে ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনায় আহতদের রক্ত দিতে এগিয়ে এলো সেই মাদ্রাসগুলিই।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এর পরই ওই মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজ্য তথা দেশের মুসলিম নেতাদের। সোশ্যাল সাইট নেটিজেনরা টিডিএনের খবর শেয়ার করে লেখেন, প্রায় সময়ই মাদ্রাসগুলির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হয়ে থাকে। কখনো বলা হয় সমাজবিরোধী কাজ কারবার হয় এই মাদ্রাসায়, আবার কখনো জঙ্গি তৈরির কারখানা উপাধি দিয়ে দেওয়া হয় চোখবুজে। কিন্তু পাঞ্জাবের অমৃতসরে ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনায় আহতদের রক্ত দিতে এগিয়ে এলো সেই মাদ্রাসগুলিই। কিছু সোশ্যাল সাইট ব্যবহারকারীর কথায়, রক্ত দিয়েও আমাদের ওপর সেই জঙ্গি তকমা থেকেই যাবে।

এদিকে, পাঞ্জাবের মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে চারিদিকে আলোচনা চলছে। অমৃতসরে রেল দুর্ঘটনায় আহতদের রক্ত দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রশংসা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী হিন্দের মহিলা নেত্রী নায়েমা আনসারীও মন্তব্য করেছেন।

নায়েমা আনসারী টিডিএন বাংলাকে বলেছেন, 'পাঞ্জাবের অমৃতসরে ‌'দশেরার' অনুষ্ঠানের সময় ট্রেন দুর্ঘটনা‌ অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত ‌আরোগ্য‌ কামনা করছি। সেই‌ সঙ্গে বর্তমানে আমাদের ভারতবর্ষ যখন সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পে জর্জরিত ‌আর ‌মুসলিমদের সন্ত্রাসী এবং ‌মাদ্রাসাগুলো‌কে সন্ত্রাসের‌ আখড়া ‌বলে চিহ্নিত করতে তত্‍পর একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল ‌তখন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মাদ্রাসা ছাত্রদের ‌রক্তদানের উদ্যোগ ‌সম্প্রীতির‌ বন্ধনে আবদ্ধ করার এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত এবং তাদের মিথ্যা ‌অভিযোগের এক বড় জবাব।' .

তিনি আরো বলেন, এই দেশের মাদ্রাসা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। দেশের কিছু বিভাজনকারী মানুষ এইসব অপপ্রচার চালিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার কাজ করে চলেছে।

সম্প্রতি রমজান মাসের রোজা রেখেই রক্তদান করে শিরোনামে এসেছিলেন কলকাতার মেটিয়াব্রুজ এলাকার এক সাহসী যুবক ইমাম আলী মোল্লা। অমুসলিম মেয়ে সৃজিতার জন্য রক্তদান করে ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে মানবতার নজির গড়া ইমামও পাঞ্জাবের মাদ্রাসগুলির দেদার প্রশংসা করেছেন। ইমামের কথায়, অনেক মুসলিম আজও রক্তদান নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। তারা ভাবেন ইসলাম বুঝি রক্তদানে অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু পাঞ্জাবের মাদ্রাসাগুলি সেই কুসংস্কার দূর করে দিয়েছে। মাদ্রাসার জঙ্গি তকমা নিয়ে ইমাম বলেন, অপপ্রচারকারীরা ভুলভাল প্রচার করে যাবে। তাদের কথায় কান দেওয়ার কিছু নেই। এই মহৎ কাজের জন্য মাদ্রাসগুলিকে স্যালুট। মাদ্রাসা না হয়ে অন্য কোনো সংগঠন হলেও আমি একই মন্তব্য করতাম।

এই একই ইস্যুতে মন্তব্য করেছেন মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য তথা জমিয়ত আহলে হাদীসের কেন্দ্রীয় সভাপতি আসগর আলী বিন ইমাম মেহেদী সালাফী। তিনি টিডিএন বাংলাকে বলেন, অনেকের কাছে মাদ্রাসা ছাত্রদের এই রক্তদান নতুন এবং অভিনব মনে হচ্ছে। কিন্তু না, মাদ্রাসাগুলি বহু আগে থেকেই এই ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে। আমরা হিন্দু-মুসলিম বুঝি না। আমরা শিখেছি একজনের প্রাণ বাঁচালে সমগ্র মানব জাতিকে বাঁচানোর সমান। আমি নিজেও মাদ্রাসার ছাত্র, পবিত্র কুরআন আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে। আর কে কি তকমা দিল ওসব ভেবে লাভ নেই। মানুষ ভুল ঠিকের বিচার করতে শিখে গেছে।

উল্লেখ্য, অমৃতসরে দশেহরার দিন রাবণ দহনের সময় ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনার পর পাঞ্জাবের সবকটি মাদ্রাসায় জরুরি ঘোষণা দিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, তারা এই রেল দুর্ঘটনায় আহতদের রক্তদান করবে। গত শনিবার থেকে রক্তদান শুরুও করে দিয়েছে ওই মাদ্রাসাপড়ুয়ারা। জানা গিয়েছে মাদ্রাসগুলি তাদের ছাত্রদের জন্য জোরালো আল্টিমেটাম জারি করে রক্তদানের নির্দেশ দিয়েছিল।

Bootstrap Image Preview