Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘অটোগ্রাফ’ না দিয়েই চলে গেলেন বাচ্চু!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৩৬ PM
আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


প্রয়াত নন্দিত সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তাঁর স্কুলজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, তখন। দশম শ্রেণীতে পড়ি। স্কুলছুটির পর প্রায় আউটার স্টেডিয়ামের খোলা জায়গায় আমাদের আড্ডা হত। সেই আড্ডায় বাচ্চু মাঝে মাঝে যোগ দিত। গিটার নিয়ে গল্প করত। বলত, কাল চিটাগাং ক্লাবে ফেরদৌস ওয়াহিদের সঙ্গে গিটার বাজিয়েছি, আজম খানের সঙ্গে গান করেছি। আজম খান তখন হাটথ্রুব, পপসম্রাট। তাই বাচ্চুর এই গল্প আমাদের কাছে বানানো মনে হত। বলতাম, ‘গাল মারার জায়গা পাস না! আজম খানের সঙ্গেও আবার গিটার বাজাস!’ বাচ্চু বলত, আজকে ঠ্যাস মারছিস। একদিন দেখবি আমি দেশের নামকরা শিল্পী হব। তোরাই তখন উল্টো অটোগ্রাফের জন্য আমার পেছনে ছুটবি।’

আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে এভাবেই স্মৃতিচারণ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি।

তিনি বলেন,  আমি আর বাচ্চু আমরা ক্লাশমেট। আমরা একসঙ্গে মুসলিম হাইস্কুলে পড়েছি। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এসএসসি পর্যন্ত একসঙ্গে কাটিয়েছি। শুরু থেকেই আমরা স্কাউটিং করতাম। স্কাউটিংয়ে টিমলিডারের অধীনে চারজন পেট্রোল লিডার থাকে। অষ্টম শ্রেণীতে উঠার পর আমি আর বাচ্চু ছিলাম সেই চার পেট্রোল লিডারের দুইজন। পরে আমি অল্পদিনের জন্য টিমলিডার হয়েছিলাম। এসময় দেখেছি তার দুষ্টুমি, দুরন্তপনা। দুরন্তপনা কাকে বলে তা সে সময়ের বাচ্চুকে না দেখলে বোঝা যাবে না। আজকের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শওকত ভাই (ডিসকো শওকত) মুসলিম হাই স্কুলে আমাদের একটু সিনিয়র ছিলেন। স্কুলে দুষ্টুমির জন্য তারও খ্যাতি ছিল। বলা চলে, বাচ্চু আর শওকত ভাই ছিল ‘দুষ্টের শিরোমনি, লঙ্কার রাজা’।’

স্মৃতিচারণ আইনেতা বলেন, ‘নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই বাচ্চুর রাতদিন গিটার নিয়ে পড়ে থাকত। লেখাপড়ার চেয়ে গিটার যখন মুখ্য হয়ে উঠে তখন বাচ্চুর উপর রেগে যান তার বাবা। একারণে একবার তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল বলে শুনেছি। বাচ্চু এসব আমাদের কাছে শেয়ার করত। একপর্যায়ে সুরের আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেল বাচ্চু। চট্টগ্রামে নামডাক কুড়ানোর পর চলে গেল ঢাকায়। এরপর ধীরে ধীরে বাচ্চু হয়ে উঠে অন্য এক বাচ্চু, বাংলাদেশের ব্যান্ডজগতের আইকন, ধ্রুবতারা।’

এদিকে আমি মুসলিম হাইস্কুল থেকে ১৯৭৮ সালে এসএসসি পাশ করে তৎকালীন ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমানে মহসীন কলেজ) ভর্তি হয়ে ওতপ্রোতভাবে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। নির্বাচিত হই কলেজ ছাত্রলীগের সেক্রেটারি। এরপর ইন্টারমিডিয়েট কলেজ এবং ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ একীভূত হয়ে মহসীন কলেজ হলে আমি সেই কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি অতপর উত্তাল ছাত্ররাজনীতির পাঠ চুকিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য একসময় ইউরোপ চলে যাই।

পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারির দায়িত্ব গ্রহণ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং মন্ত্রী হয়ে ব্যস্ততম সময়গুলোতেও বাচ্চুর সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, টেলিভিশনের প্রোগ্রামে তার সঙ্গে প্রায় দেখা হত। বাচ্চুকে বলতাম, তোর কথাটিই সত্য হল। তোর অটোগ্রাফের জন্য এখন কত মানুষের অপেক্ষা! নেয়, এবার আমারে একটা অটোগ্রাফ দেয়! বাচ্চু একগাল হেসে দিয়ে বলত, ‘তুইই আমাকে অটোগ্রাফ দিবি। তুই মস্তবড় নেতা, সরকারের মন্ত্রী। বলতাম, মন্ত্রীর বাইরে আমি একজন মানুষ, তোর ভক্ত। তোর ভক্ত হিসেবে একটা অটোগ্রাফ তো পেতেই পারি!

তুই নয়, আমারে দেয়- এই করতে করতে বাচ্চুর অটোগ্রাফটা আর নেয়া হল না। আমাকে অটোগ্রাফ না দিয়েই বাচ্চু না ফেরার দেশে চলে গেল।

Bootstrap Image Preview