ছেলে আর ছেলের বউ সবাই তাকে একলা ফেলে চলে গেছে। বাড়ি-ঘর আর জমানো সঞ্চয় যা ছিল তাও শেষ। হাওড়ার পানিয়াড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত বাংলার শিক্ষিকা শেফালি মজুমদারের ঠিকানা এখন স্টেশনে।
প্লাস্টিকে মোড়া কিছু কাপড় আর এক বোতল জল নিয়ে এই বৃদ্ধা মা পড়ে আছেন ভারতের আন্দুল স্টেশনের প্রতীক্ষালয়ের একপাশে। তার পেট চলছে রেলযাত্রীদের বাড়িয়ে দেওয়া খাবারে!
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এখন সবচেয়ে বড় উৎসবের সময়। চারদিকে বাজছে ঢাকঢোল আর সূর উঠছে উলুধ্বনির। এই উৎসবের আবহে বৃদ্ধার চোখে জল! তবু ছেলে-বউমার বিরুদ্ধে থানায় যাননি।
শেফালিদেবী বলছেন, কেউ আমার ছেলে-বউমাকে খুঁজে দিক। আমি ওদের কাছেই ফিরতে চাই।
শেফালির ঘটনার কথা জেনে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, রেল পুলিশকে বলছি আপাতত বৃদ্ধার দেখভাল করতে। প্রয়োজনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে। তারপরে কোথাও তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হবে।
জানা যায়, শেফালি দেবীর স্বামী বিজয়রতন মজুমদার ২০ বছর আগে মারা যান। দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার ছিল বৃদ্ধার। ২০০৩ সালে বড় ছেলে মারা যান। ৩৫ বছর শিক্ষকতার পরে ২০০১ সালে অবসর নেন তিনি।
এককালীন পেনশেনের টাকায় শিবপুরে নতুন বাড়ি করে ভাড়াবাড়ি ছেড়ে বসবাস শুরু করেন। ২০০৬ সালে ছেলের বিয়ে দেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সুবীরের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। পরের বছর ফের ছেলের বিয়ে দেন শেফালি দেবী।
শেফালি দেবীর অভিযোগ, ব্যবসার জন্য টাকা লাগবে বলে ছোট ছেলে বাড়ি বিক্রি করিয়েছিল। ব্যবসার উপার্জনে কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই কথায় বাড়ি বিক্রি করে তারা মৌড়িগ্রামে ভাড়া চলে যান। কয়েক সপ্তাহ সেখানে কাটানোর পরে একদিন সকালে তার গয়না-টাকা নিয়ে ছেলে-বউমা বেরিয়ে যায়, আর ফেরেনি।
বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, এলাকার এক বাড়িতে আয়ার কাজ নিয়েছিলাম। কিন্তু বার্ধক্যের কারণে বছরখানেক আগে ছেড়ে দেন তিনি। ভাড়া দিতে না-পারায় কয়েক মাস পরে বাড়ির মালিক বের করে দেয়। আত্মীয়দের কাছেও ঠাঁই পাননি।
তিনি জানান, একটা সময় শেফালি দেবী আশ্রয় পান প্রাক্তন সহকর্মী সন্ধ্যামণি বিশ্বাসের বাড়িতে। কিন্তু পুজোর ঠিক আগে সেই জায়গাও হারিয়ে যায়। পরে তিনি আন্দুল স্টেশনে চলে আসেন।