Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিজের হত্যা’র ঘটনা নিজেই রেকর্ড করেছিলেন জামাল খাসোগি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০১:২৩ PM
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০১:২৩ PM

bdmorning Image Preview


তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর জামাল খাসোগি যখন প্রবেশ করেছিলেন, তখন তিনি তার হাতে থাকা ‘অ্যাপল ওয়াচ’এর রেকর্ডার চালু করে রেখেছিলেন। ফলে বিশ্বগণমাধ্যমে বলা হয়েছে নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে বন্দী, নির্যাতন ও ‘হত্যা’র ঘটনা নিজেই রেকর্ড করেছিলেন।

ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে সাংবাদিক জামাল খাসোগি ‘হত্যার’ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে তাদের কাছে অডিও-ভিডিও, সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকার কথা জানিয়েছে দেশটি। এদিকে খাসোগি নিখোঁজের ঘটনা তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে তদন্তে সৌদি প্রতিনিধিদল গতকাল শুক্রবার তুরস্কে পৌঁছেছে।

এদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, সৌদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ আবদুলাজিজ বিন সৌদ বিন নাইফ বিন আবদুলাজিজ আল সৌদ বলেছেন, ‘তাঁকে (খাসোগি) হত্যার নির্দেশ দেওয়ার তথ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ।’ তাঁর ভাষায়, সৌদি চায়, ঘটনার ‘পুরো সত্য’ বেরিয়ে আসুক।

২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার আগে তিনি নিজের অ্যাপল ওয়াচে রেকর্ডিং চালু করেন। পরে কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর তাকে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন ও সবশেষে ‘হত্যা’র ঘটনা সবই ওই অ্যাপল ওয়াচে রেকর্ড হয়। পরে সেগুলো তার ব্যবহৃত আইফোন ও তথ্য সংরক্ষণের অনলাইন স্টোরেজ ‘আইক্লাউডে’ জমা হয়। এসব রেকর্ডিংয়ে তাকে হত্যা করার ঘটনা প্রমাণ হয়। খবরে আরও বলা হয়েছে, কনস্যুলেটে প্রবেশের সময় খাসোগি তার মোবাইল বাইরে তার বাগদত্তার কাছে রেখে যান। খাসোগি কনস্যুলেট থেকে আর বের না হওয়ায় ওই মোবাইল নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনী।

তদন্তকারীরা বলছেন, হত্যাকারীরা কয়েক দফা জামাল খাসোগির হাতে থাকা অ্যাপল ওয়াচের অপারেটিং সিস্টেমে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। এ জন্য তারা বিভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন। সবশেষে খাসোগির আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে অ্যাপল ওয়াচের অপারেটিং সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিতে সফল হন হত্যাকারীরা। কিন্তু তারা খুব অল্প ফাইল মুছে ফেলতে পেরেছেন। অডিও রেকর্ডিংয়ের একটি বিরাট অংশ কনস্যুলেটের বাইরে খাসোগির বাগদত্তার হাতে থাকা আইফোনে জমা হয়েছে।

সৌদি যুবরাজের মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক সৌদি সাংবাদিক খাসোগি গ্রেপ্তার আতঙ্কে এক বছর আগে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। ব্যক্তিগত কাগজপত্রের প্রয়োজনে ২ অক্টোবর সৌদি কনস্যুলেট ভবনে তিনি প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। বলা হচ্ছে, সৌদি থেকে দুটি ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগি হত্যায় অংশ নেয়। হত্যার পর ওই স্কোয়াড দ্রুত তুরস্ক ত্যাগ করে। তুরস্কের স্থানীয় দৈনিকগুলোয় ওই ১৫ জনের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন ব্যক্তি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটের সদস্য। এদের একজন সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।

ওয়াশিংটন পোস্টকে একটি সূত্র জানিয়েছে, খাসোগিকে মারধরের শব্দ শোনা গেছে। রেকর্ডিং থেকে বোঝা গেছে, খাসোগিকে হত্যার পর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। আরেকটি সূত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছে, খাসোগি এবং আরবি ভাষায় কথা বলা বেশ কয়েকজন মানুষের আওয়াজ পাওয়া গেছে। খাসোগিকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে।

খাসোগি নিখোঁজ, কিন্তু তাঁর হত্যার ব্যাপারে নিশ্চিত তুরস্ক কর্তৃপক্ষ। এরপরও তুরস্ক সরকার সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘটনাটি যৌথভাবে তদন্ত করতে রাজি হয়েছে। সৌদির একটি প্রতিনিধিদল গতকাল তুরস্কে পৌঁছেছে। সপ্তাহজুড়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সাল তুরস্কে এসেছিলেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন। তাঁর সফরের সময় দুই দেশের যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।

যাঁর দিকে অভিযোগের তির, সেই ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরবের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। খাসোগি ওই দিন কনস্যুলেট ভবনে এসেছিলে স্বীকার করে তিনি বলেন, কাজ শেষে খাসোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বেরিয়েও গেছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, খাসোগি ‘বেরিয়ে গেছেন’ বলে দায় এড়াতে পারে না সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর জামাতা জারেদ কুশনারের সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্সের এখন সুসম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খুব একটি উচ্চাবাচ্য করতে না চাইলেও সিনেটের ক্রমাগত চাপের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প।

বুধবার বব কোর্কারের নেতৃত্বে মার্কিন সিনেটে দ্বিদলীয় ২২ জন সিনেটর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি চিঠি স্বাক্ষর করেছেন। খাসোগির বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তাঁর তদন্ত চেয়েছেন তাঁরা।

Bootstrap Image Preview