জাল নোট তৈরির অভিযোগে তাকে চারবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চারবারই তিনি জামিন পান। বের হয়েই আবার জড়িয়ে পড়েন আগের পেশায়। তার নাম হুমায়ন কবির। শুধু হুমায়ন কবির আর পলাশই নন, জাল নোট তৈরি ও বাজারজাতের সঙ্গে যুক্ত যাঁদের পুলিশ আটক করেছে, সবাই জামিনে বেরিয়ে আবার ব্যবসা জমিয়ে বসেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার ও এর সঙ্গে জড়িত ১০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব ঘটনা নিয়ে ২৫টি মামলা হয়েছে।
পুলিশ দাবি করছে, জাল নোট তৈরি ও বাজারজাতে জড়িত এ রকম ২৬টি দলকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। ২৯ সেপ্টেম্বর ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) রাজধানীর তুরাগের একটি জাল নোটের কারখানা থেকে আবুল হোসেনকে ৫১ লাখ টাকার জাল নোট, জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করে। এর আগে জাকির হোসেন, আবদুর রশীদ, জাহাঙ্গীর আলম, সাইফুল ইসলাম, মাহবুব মোল্লা, মামুন, আয়নুল, সোলায়মান মজুমদার, পারভেজ ও আবুল কালামকে জাল নোটসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরাও জামিনে বেরিয়ে গেছেন।
পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে জাল নোটের ব্যবসা করে আসছিলেন। কিছুদিন আগে সহযোগীসহ তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁরা ১০ কোটি টাকার জাল নোট বাজারজাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ জন্য প্রতি মাসে তাঁরা ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়তেন। পুলিশ যেসব কাগজ ও সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে, তা দিয়ে ৭ কোটি টাকার জাল নোট বাজারজাত করা যেত।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, ধরা পড়া একটি চক্রের প্রধান হুমায়ন এর আগে তৈরি পোশাক কারখানায় কাপড়ে রং করার (ডাইং) কাজ করতেন। আরেক দলের নেতা কাউসার জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে বলেন, তিনি তাঁর বড় ভাই হুমায়ন কবিরকে জাল টাকা তৈরিতে সহযোগিতা করতেন। হুমায়নের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রে এ পেশায় আসে সুমন ও বাবু। এই দুজন আগে পুরান ঢাকায় জর্দার কৌটায় রং লাগানোর কাজ করতেন। এখন সুমন নিজেই দলনেতা। একইভাবে হুমায়নের হাত ধরে আলাউদ্দিন ও পলাশ এ পেশায় যুক্ত হন। তাঁরা দুজন আগে আবাসিক হোটেলে বয় হিসেবে চাকরি করতেন।
ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সাধারণত কাঁচাবাজার ও বিপণিবিতানে কেনাকাটার মাধ্যমে জাল নোট ছড়ানো হয়। এক হাজার টাকার জাল নোট খুচরা করতে এক-দুই শ টাকার কেনাকাটা করা হয়। আবার ওপরে-নিচে দু-চারটি আসল নোট দিয়ে ভেতরে জাল নোট রেখে বান্ডিল তৈরি করা হয়। এসব বান্ডিল দিয়ে দামি পণ্য কেনা হয়, যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে।