উড়িষ্যার গজপতি জেলায় ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও চারজন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ত্রাণ কমিশনার বি পি শেঠি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রবল বৃষ্টির কারণে কয়েকজন গ্রামবাসী পাশের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই গুহা ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ পর্যন্ত ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন এখনো চারজন।
বি পি শেঠি জানান, যে জায়গায় এই ভূমিধসটি ঘটেছে তা একেবারে একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভেতর অবস্থিত। ঝড়ের কারণে বড় বড় গাছ পড়ে রাস্তা আটকে যাওয়ায় সেখানে পৌঁছানোও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গজপতির ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরই নিহত ও আহতদের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
এর আগে গত বুধবার ভারতের ওদিশার দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় তিতলি। প্রাণঘাতী এ ঝড়ের আঘাতে প্রতিবেশী অন্ধ্র প্রদেশের দুজন নিহত হয়েছিলো। ঝড়ো বাসাত উঁপড়ে ফেলেছে গাছ আর বিদ্যুতের খুঁটি। ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথোরিটি এসব তথ্য জানায়।
বঙ্গোপসাগরের 'তীব্র মাত্রর সাইক্লোন ঝড়' হিসেবে গণ্য হয়েছে তিতলি। সঙ্গে ছিল তীব্র বৃষ্টি। ওদিশার উপকূলীয় অঞ্চলের তিন লাখের বেশি সংখ্যক মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।সৈকতের আশপাশের এলাকা থেকে সবাকে নিরাপদে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
এর আগে বুধবার উড়িষ্যার রাজ্য সরকার উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রায় তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ওদিশার ৫টি উপকূলীয় শহর থেকে কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মারাত্মক বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাড়িছাড়া মানুষগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান দেয়া হয়েছে। গর্ভবতী নারীদের রাখা হয়েছে হাসপাতালে।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানায়, এই সাইক্লোনের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানা শেষ হয়েছে। স্থলভাগে রয়েছে এর 'সেন্টার অব আই অব সাইক্লোন'।
ওড়িশায় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে গঞ্জাম, গজপতি, খুরদা, পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপড়া, ভদ্রক ও বালেশ্বর জেলা। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গজপতি। সেখানকার প্রায় তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়েছে সরকার। মু্খ্যমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে গোদাবরীর কাকিনাড়া থেকে যে ৬৭টি মাছ-ধরা নৌকা সমুদ্রে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৬৫টি ফিরে এসেছে। বাকি দু’টির খোঁজ চলছে।
যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী কয়েক দিনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে ওড়িশার কোনও কোনও এলাকায়। মুখ্যসচিব এ পি পাধি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমের কিছু অংশ ছাড়া গোটা রাজ্যেই কম-বেশি বৃষ্টি হতে পারে। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে বন্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’’ শুক্রবার সকালের মধ্যে শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে তিতলি।
পুজোর মরসুমে পুরীতে স্বভাবতই পর্যটকের ভিড়। হঠাৎ তিতলির আগমনে হতাশ তাঁরা। সমুদ্রের ধারে অস্থায়ী সব দোকান বুধবার তুলে দেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবারও বসতে দেওয়া হয়নি তাদের।
একটি হোটেলের ম্যানেজার শঙ্করনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ঝোড়ো হাওয়া কমলেও সমুদ্র কিন্তু অশান্ত। প্রচুর লাইফ গার্ড রয়েছেন। পর্যটকদের সমুদ্রে নামায় আজও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’