তাকে জানানো হলো ‘জেলা পুলিশ লাইন্সে মাসিক কল্যাণ নামে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি পুলিশের পোশাকের আদলে একসেট পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে তার জন্য। পুলিশের লাইন্সে পৌঁছানোর পরই তাকে পুলিশের পোশাক পরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে।’
জানানো নির্দেশের অনুসরণ করেই পুলিশের নতুন পোশাক পরে সভায় উপস্থিত হলেন আজাহার আলী। এরপর থেকে তার খুশির সীমা রইলো না। কল্যাণ সভায় উপস্থিত হলে পুলিশ সুপার তার হাতে তুলে দিলেন নগদ দশ হাজার টাকা। এদিকে পুলিশ সুপারের উদ্যোগে ইতোমধ্যে বাড়ি তৈরী করার সরাঞ্জাম হিসেবে ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড পৌঁছে যায় তার বসত ভিটায়।
প্রসঙ্গত, ২০ বছর যাবৎ স্বেচ্ছায় ট্রাফিক ডিউটি করে আসছেন মান্দা উপজেলার লক্ষীরামপুর গ্রামের আজাহার আলী। বিশ বছর আগে মহাদেবপুর উপজেলার বড় ব্রিজ এলাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনার এক মা ও তার মেয়েকে নিজ চোখে মারা যেতে দেখেছিলেন তিনি। সেই থেকেই সড়কে মৃত্যু ঠেকাতে তার এ স্বেচ্ছাশ্রম। নওগাঁর মান্দা উপজেলার রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের চারমাথায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এ মানুষটি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন।
পুলিশের কোন সদস্য নন। কোন সরকারী কর্মচারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্তও নন। কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি না হয়েও শুধু সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে প্রায় ২০ বছর ধরে নওগাঁর মান্দা ফেরিঘাট চৌরাস্তায় ও মহাদেবপুর ব্রীজের পাশে স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক সেবা দিয়ে আসছেন ভূমিহীন আজাহার আলী। এবার তার এ কাজের প্রতিদান হিসেবে পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনের উদ্যোগে নতুন পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে তাকে।
অন্যদিকে তাকে একটি নতুন সাইকেল দেবেন বলে জানিয়েছেন জেলা আনসার ও ভিডিপির কমান্ডেন্ট অম্লান জ্যোতি নাগ। এছাড়া জেলা পুলিশের রেশন থেকে প্রতি মাসে তাকে সহযোগিতা করার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জেলা আনসার ও ভিডিপির কমান্ডেন্ট অম্লান জ্যোতি নাগ জানান, অল্প দিনের মধ্যেই আজহারকে নতুন একটি বাইসাইকেলও প্রদান করা হবে। যাতে তিনি বাড়ি থেকে ফেরিঘাট চৌরাস্তায় যাওয়া আসা করতে পারেন।
উল্লেখ্য, নওগাঁ জেলা পুলিশ ৭ অক্টোবর আজাহারকে সংবর্ধনা দেয়ার পর এবার ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার এক লক্ষ টাকার এফডিআর প্রদান সহ সংবর্ধনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এরই মধ্যে।