বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে সাগর তীরবর্তী চট্টগ্রাম নগরজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থামেনি। থেমে থেমে হালকা মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে নগর জীবন অচল হয়ে পড়েছে। নগরের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে।
গত তিন দিন ধরে শহরে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। স্কুল, কলেজ গামী শিক্ষার্থী, অফিস আদালত মুখী চাকরিজীবিরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বেশী। খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষের কষ্টের শেষ নেই। ব্যবসা বনিজ্যে চলছে স্থবিরতা। বৃষ্টির সাথে সাথে বেড়ে গেছে নিত্য প্রয়োজণীয় সামগ্রীর মূল্য। একইসঙ্গে সাগর উত্থাল থাকায় চট্টগ্রাম ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, তিতলি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের ও উড়িষ্যায় আঘাত হেনেছে। এর প্রভাবে গত সোমবার থেকে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার হতে পারে। আবহাওয়া অফিস আরো জানান, বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম মধ্য ও পূর্ব মধ্য অংশে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নগরে ভোর থেকে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা থেমে থেমে বৃষ্টি চলতে থাকবে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান, পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. রুবেল।
তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম মধ্য ও পূর্ব মধ্য অংশে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে নগরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে নগরের চকবাজার, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকা, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, সকাল থেকে রাস্তায় পানি। বৃষ্টির পানি জমে আছে। নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এরকম হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়।
অপরদিকে নগরে তিতলি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, ‘দুর্যোগকালীন শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ দেয়া খুব জরুরি। কিন্তু আমাদের নগদ টাকার সংকট আছে। বিষয়টি মন্ত্রীকে জানিয়েছি। আশা করি, টাকা পেয়ে যাবো।’
ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় ৪৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে। যে কোনো প্রয়োজনে ১০৯০৪৩ নম্বরে কল এবং ৩৩৩ নম্বরে ম্যাসেজ দেওয়া যাবে।’
সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, চট্টগ্রাম জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় ১ জন ডাক্তারসহ তিন সদস্যের ২৮৪টি টিম প্রস্তত আছে। প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুম ০৩১-৬৩৪৮৪৩ এবং ০১৮১৬-০৩১১২১-এ যোগাযোগ করে দুর্যোগকালীন সহযোগিতা নেওয়া যাবে।