বালিয়াডাঙ্গীতে বন্যার্তদের সহযোগিতায় টাকায় লাইব্রেরী, সহযোগিতাকারীদের ক্ষোভ প্রকাশ

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পানিবন্দী মানুষের সহযোগিতার জন্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা অর্থ এক বছরেও বিতরণ না করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গণগ্রন্থাগার নির্মাণ কাজে ব্যয় করেছেন। এ অর্থ স্থানীয় এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একদিনের বেতন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। 

বন্যার্তদের জন্য দান করা টাকা বিতরণ না করে লাইব্রেরীতে দেওয়ার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ সরকারি কর্মচারি, এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান।

তারা বলছেন, লাইব্রেরী নির্মাণ বাস্তবায়নকারী হিসেবে উপজেলা প্রশাসন দেখানো হয়েছে। অথচ আমাদের টাকায় নির্মিত। যার ক্রেডিট নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। 

তবে বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য উত্তোলনকৃত সহযোগিতার টাকা দিয়ে স্থানীয় লোকজনের জন্য উপজেলা পরিষদ চত্বরে পাবলিক লাইব্রেরী নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানালেন ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী আঃ মান্নান। তিনি বর্তমানে পঞ্চগড় জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত আছেন। গত ১৫ দিন হলো তিনি এখান থেকে পদোন্নতি পেয়ে পঞ্চগড়ে গেছেন। 

গত বছরের আগস্ট মাসে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চার ইউনিয়নে আকস্মিকভাবে বন্যা দেখা দেয়। আকস্মিক ওই বন্যায় উপজেলার ধনতলা, পাড়িয়া, আমজানখোর ও বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরে। বাড়ি ঘর ভেঙ্গে গেলে আশ্রয় নেয় আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ধীরে ধীরে পানি নেমে যাওয়ার পর তারা স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় কোনমতে ছোট বাঁশের ঘর তুলে এখনও জীবনযাপন করছেন। 

ওই সময় বন্যার্তদের সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি স্থানীয় এনজিও, রাজনৈতিক, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকগুলো সহযোগিতার হাত বাড়ায়। মানুষের অসহায়ত্ব দেখে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ থেকে রেজুলেশনের মাধ্যমে বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সিদ্ধান্তে সকল সরকারি, বেসরকারি চাকরি জীবীরাও একদিনের বেতন ৫ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা এবং স্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকা বালিয়াডাঙ্গী২৪ ডট কম ১৫ হাজার টাকা বন্যার্তদের জন্য দেন।

বন্যার্তদের সহযোগিতার নামে এ টাকা সংগ্রহ করার একবছর পেরিয়ে গেলেও তাদের সহযোগিতা করা হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেক মানুষ এখনো ঝুপরিতেই বসবাস করছেন। একই ঘরে তাদের পরিবার পরিজন ও গরু-ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কেউ কেউ একটি ঝুপরিতেই গরু-ছাগলের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করছে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কাশুয়া খাদেমগঞ্জ খেরবস্তি গ্রামের বিশ্বাসের স্ত্রী ফাতেমা জানান, আমার চার ছেলেমেয়েসহ ছয় সদস্যের পরিবার।

বড় মেয়ে স্থানীয় দাখিল মাদরাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। আমার দুটি ঘর ছিল। গত বছর বন্যায় একটি সম্পূর্ণ ও একটির অর্ধেকটা ভেসে যায়। এখন এই অর্ধেক ঘরে চার ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী ও গরু ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে বসবাস করছি। একবছর পার হলেও এখনও সরকারি বেসরকারি তেমন কোন সহযোগিতা পাইনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

একই এলাকার আফিজা বেগম জানান, গত বছর ফিতরা ও খয়রাতির টাকা দিয়ে এই ঝুপড়িটা তুলেছি। বন্যার সময় সাহেবরা সাহায্য দিবে বলছিল কিন্তু এক বছর পার হলেও কোন সাহায্য পাইনি। ওই গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে আফিজুল হকও একই কথা বললেন। এ রকম অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন ওইসব এলাকার অসংখ্য লোক।

বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বিশু মোহাম্মদ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের প্রধান সরকারি, বেসরকারি চাকরি জীবীদের একদিনের বেতন বন্যার্তদেন জন্য সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও কেন ওই টাকা বন্যার্তদেন মাঝে বিতরণ করেন নি এটা আমার বোধগম্য নয়।

একদিনের বেতন প্রদানকারী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মচারি জানান, আমরা আমাদের কষ্টার্জিত বেতনের টাকা বন্যার্তদেন জন্য দিয়েছি। বন্যার্তদের সহযোগিতা না করে লাইব্রেরী বানিয়েছেন। উপজেলা পরিষদে কি টাকার অভাব?

এ ঘটনা প্রকাশ হবার পর ভিন্ন খাতে টাকা ব্যয় করায় সহযোগিতা প্রদানকারী অনেকেই এ টাকা ফেরত চেয়েছেন। 

বদলি হওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (বর্তমানে পঞ্চগড়ের এডিসি) আব্দুল মান্নান এর কাছে এ বিষয়ে ফোনে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি এই মুহুর্তে বালিয়াডাঙ্গীতে নেই। ওই টাকা পাবলিক লাইব্রেরীতে দেওয়া হয়েছে।