টোকিওর সুকিজি বাজারটি সামুদ্রিক মাছের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত। এই বাজারেরর বয়স প্রায় ৮০ বছরেরও বেশি। ১৯৩৫ সালে এ মাছের বাজারের যাত্রা শুরু। কিন্তু গত শনিবারই ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে বিশ্বের বৃহত্তম এ মাছ বাজারের শেষ কোলাহল। বাজারটি এখানে বন্ধ করে দিচ্ছে জাপান সরকার। ১৬ অক্টোবর থেকে তোয়োসুতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মাছের বাজার বসবে।
সরিয়ে নেওয়ার ফলে জনপ্রিয়তা হারাতে পারে ঐতিহ্যবাহী বাজারটি এমন ধারণাই বিশেষজ্ঞদের। বাজারটি টুনা মাছের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে বিভিন্ন দামের চার শতাধিক সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যেত। শনিবার টোকিওর কেন্দ্রস্থল থেকে কৃত্রিম দ্বীপ তোয়োসুতে সরিয়ে নেওয়া হবে ৮৩ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ মাছের বাজার। সুকিজিকে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের জন্য অস্থায়ী পার্কিংয়ের স্থান করা হবে এখানে।
বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের জন্য জনপ্রিয় সুকিজি বাজার। বাজার বন্ধের সিদ্ধান্তে হতবাক অনেক বিদেশি পর্যটকও। এই বাজারে নির্ভেজাল পণ্য বিক্রি হয়। তাই ভালো পণ্যের জন্য এখানে ভিড় করেন সবাই। এটি জাপানের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। একে অন্যত্র সরিয়ে নিলে একই ধরনের সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও মনে করছেন অনেকেই।
এদিকে সুকিজি বাজার বন্ধের ঘোষণার সরকারি প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন বাজার–সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে র্যালিতে অংশ নেন দোকান মালিক, ব্যবসায়ী-শ্রমিক ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানেরা।
শনিবার ভোরে সুকিজি মার্কেটে সর্বশেষ নিলামে ১৬২ কেজির টুনা মাছ ৩৭ হাজার ৮১৮ ডলারে বিক্রি হয়। ওই দিন দুপুরে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে সুকিজি বাজারের বিক্রিবাট্টার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এরপরই শত শত মাছ বিক্রেতা বহু বছরের পুরোনো ব্যবসায় কেন্দ্রটি নতুন স্থানে স্থানান্তর প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু করেন।
সিফুড হোলসেলার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিরুইয়াসু আতহ বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত এবং খুশি। কারণ, এত বছর ধরে আমরা এখানে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে ব্যবসা করতে পেরেছি। আমি সুকিজিকে আমার আত্মার অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মাছের বাজার সুকিজিতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান। আর প্রতিদিন এখানে কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে। ২০১০ সালের নিবন্ধন অনুযায়ী বাজারটিতে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কর্মী কাজ করছেন। কিন্তু বাজারটি ক্রমেই অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠায় কর্তৃপক্ষ একে একটি নতুন জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ ছাড়া ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের জন্য এই অঞ্চল পুনর্নির্মাণ করা হবে। এসব কারণেই টোকিও তোয়োসুতে বাজারটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর সুকিজিকে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের জন্য অস্থায়ী পার্কিং স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
বিশ্লেষকেরা জানান, দৈনিক প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলারের মাছ বিক্রি হয় সুকিজি বাজারে। এ ছাড়া দেশটির অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে বাজার কেন্দ্র করে টোকিও উপসাগরের পাড়ে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁ ও সুপার মার্কেটগুলো।