সৈয়দ রোকনুজ্জামান, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
১০ অক্টোবর চড়ারহাট গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয় শতাধিক নিরীহ জনতাকে। নির্মম এই গণহত্যার কথা মানুষ ভুলতে পারেনি আজও। অক্টোবর এলেই এখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
নবাবগঞ্জের পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাটে (প্রাণকৃঞ্চপুর) ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিরীহ সাধারণ নারী-পুরুষকে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে একত্রিত করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহতও হয়।
সেই শহীদদের গণকবরগুলো সংরক্ষণের জন্য শহীদ পরিবারসহ এলাকাবাসী আজও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ৯ অক্টোবর বিরামপুর উপজেলার আলতাদিঘী নামক স্থানে গরুর গাড়িতে করে কয়েকজন খাঁন সেনা বিরামপুর ক্যাম্পে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা করে। এ সময় ৭ জন খাঁন সেনাকে হত্যা করা হয়। খাঁন সেনাদের সাথে ২ জন রাজাকারও ছিল। ওই রাজাকাররা খাঁন সেনাদের হত্যা করার খবর বিরামপুর ক্যাম্পে জানায়।
খবর পেয়ে ক্যাম্প কমান্ডার একজন মেজর প্রতিশোধ নিতে হিংস্র হয়ে উঠে। তিনি তার ফোর্সদের নিয়ে ৯ অক্টোবর রাতেই পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাট (প্রাণকৃঞ্চপুর) ও আন্দোলগ্রাম (সারাইপাড়া) ঘেরাও করে। ১০ অক্টোবর ভোর রাতে ওই গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষদের কাজের কথা বলে চড়ারহাটের একটি স্থানে সাধারণ ওই মানুষগুলোকে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এতে ২ জন মহিলাসহ ১৫৭ জন শহীদ হন।
শহীদদের সকলের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ৯৩ জন শহীদের লাশ সনাক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে চড়ারহাট (প্রাণকৃঞ্চপুর) গ্রামের ৬১ জন এবং আন্দোলগ্রামের (সারাইপাড়া) ৩২ জন। ওই সময় এক কবরে একাধিক শহীদের লাশ দাফন করা হয়েছিল। সেই দিনের ঘটনা ও শহীদদের স্মৃতি আজও তাদের আপনজনদের মাঝে নাড়া দেয়।
শহীদ পরিবারগুলোর দাবি ছিল- গণহত্যার স্থানে একটি স্মৃতি মিনার করে দেয়ার। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ২০১১ সালে সেখানে একটি স্মৃতি মিনার তৈরীর ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক।
মিনারের কাজ শেষ হলে তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জামাল উদ্দীন আহমেদ। প্রতি বছরের মত স্থানীয়রা আযোজন করেছেন আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের।