বিচারিক প্রক্রিয়ায় শেষ হতে হতে ১৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন। নিম্ম আদালতে দেওয়া ফাঁসির আদেশ থেকে ছয় মাস আগে খালাস দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু আইনি জটিলতা কারণে মিলছিল না মুক্তি। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কারামুক্তি না হলেও চিরমুক্তি হয়েছে তার। কারাগারে সকালে মৃত্যু হয় আর বিকালে পৌঁছাল ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাসের আদেশ।
রবিবার সকালে সাতক্ষীরার জোড়া পুলিশ খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ওবায়দুর রহমান ওরফে অবেদ আলি খুলনা কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। আর বিকালে পৌঁছাল ফাঁসির দণ্ড থেকে তার খালাসের আদেশ। রাতে তার লাশ নিয়ে আসা হয় নিজ বাড়ি সাতক্ষীরার কুখরালিতে। অবেদ আলি ওই গ্রামের রজব আলির ছেলে।
অবেদ আলির স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন রায়ের কপি সময়মতো না আসায় অভিযোগ করে বলেন, তারা বলে- টাকা দাও, পয়সা দাও কাড়ি কাড়ি। পাবো কোথায় আমরা? আমার স্বামী বিনা দোষে ১৩ বছর জেল খেটেছেন। তিনি একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।
তাঁর নিরপরাধ স্বামীর জেল খাটা ও যথাযথ চিকিৎসা ছাড়াই মারা যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আবেদ আলীর মেয়ে নাজমা সুলতানা বলেন, রবিবার কাগজপত্র আসলো। আমি গাড়িও ঠিক করে রেখেছিলাম বাবাকে বাড়ি নিয়ে যাবো। কিন্তু রাস্তায় থাকতে আমাকে ফোন করা হয়, তোমার বাবা আর নেই।
আবেদ আলী তত্বাবধায়নে থাকা চিকিৎসক জানান, মুক্ত পরিবেশে সন্তানদের সাথে বাঁচার আকুতি ছিলো তার।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের ছফুরন্নেসা কলেজের সামনে ফটিক বাবুর বাড়ির কাছে দুই পুলিশ কনস্টেবল ফজলুল হক ও আবদুল মোতালেব সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ সময় আহত হন কনস্টেবল আবদুল আহাদ। তারা বাইসাইকেলে বাঁকাল এলাকায় ডিউটি সেরে রাত সোয়া ২টার দিকে কর্মস্থল ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়িতে ফিরছিলেন।
২০০৬ সালে এ মামলায় আসামি রায়হানুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও ওবায়দুর রহমান ওরফে অবেদ আলিসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া আরও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০১১ সালে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে ওবায়দুর রহমান অবেদ আলি খালাস পান। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ১১ এপ্রিল খালাসের আদেশ বহাল থাকে। তবে খালাসের এই আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়।