কয়েকদিন পরই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নারী পুরুষ সকলে মিলে তৈরি করছেন প্রতিমা। তাই এই পূজাকে সামনে রেখে বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলার মৃৎ শিল্পীদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে দুর্গাপূজা এলেই বেড়ে যায় এই শিল্পের সাথে জড়িতদের ব্যস্ততা।
পূজার কয়েকদিন ধরে মাদুরের ওপর মাটির তৈরি রকমারি পণ্যের পসরা নিয়ে সকল বয়সীদের জন্য চলে মেলা। সেই মেলায় বিক্রির জন্য বাড়িতে মহিলারা তৈরি করছেন মাটির তৈরি হাড়ি, পাতিল, কড়াই, তৈজসপত্র, পুতুল, তরমুজ, আম, জাম, কাঠাল, টিয়া, হাঁস, মোরগ, হাতি, বাঘ, হরিণ, মাছ, গরু, বিড়াল, খেলনা সামগ্রীসহ হরেক রকম রঙে রঞ্জিত জিনিষপত্র।
উপলক্ষ্য একটাই, তা হলো শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠিত মেলায় এসব তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করা। ক্রেতাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে বাস্তবের সঙ্গে অনেকটা মিল রেখে নানা রংয়ের মিশ্রণ ঘটিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় এসব পণ্য।
মৃৎশিল্পী অন্ন পাল বলেন, সারা বছর হাড়ি, পাতিল, সরা, কলস, খোড়া, দোনাসহ বিভিন্ন ধরণের মাটির সামগ্রী তৈরি করে বাজারের বিক্রি করি। বাজারে মাটির তৈরি জিনিস পত্রের দাম ভাল না পাওয়ায় আমাদের সংসার চালাতে বেশ কষ্ট হয়। তাই আমরা প্রতিটি বছর এ সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকি।
মৃৎশিল্পী বিশাখা পাল জানান, মাটির জিনিষ তৈরি করে আমরা মেলায় বিক্রি করি। শিশু, কিশোর-কিশোরী মাটির তৈরি পণ্য বেশি পছন্দ করে। শিশুদের বায়নার রকমারি খেলনার মধ্যে প্রাধান্য পায় টিয়া পাখি। মাটির তৈরি ব্যাংকগুলো নারী ক্রেতারাই বেশি কেনেন। বিশেষ করে পূজার সময় আমাদের দম ফেলবার সময় পর্যন্ত থাকে না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যে পরিমাণ পরিশ্রম করা হয়, তাতে মনে হয় সে অনুযায়ী আমাদের লাভ থাকে না।
মৃৎশিল্পী খগেন্দ্র নাথ পাল জানান, আমাদের এই ব্যবসা এখন আর খুব একটা বেশি চলে না। পূজা আসলে আমরা যে সকল খেলনা তৈরি করি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খুশির জন্য, তাও বাজারে প্লাষ্টিকের আধিক্যে হারিয়ে যাচ্ছে এসব মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল। আমাদের এই ব্যবসাটা বাপ-দাদারা করেছে বলে, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এখনও ছাড়তে পারছি না। সরকার আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দিলে আমরা আমাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারব।
মৃৎশিল্পী গীতা রাণী পাল জানান, আমাদের এই মাটির কাজে বেশি অর্থ জোগায় না। অন্য জায়গায় কাজ না করে বাড়ি বসে বসে আমরা এই সব কাজ করি।
যশোর জেলা পূজা উদ্যাপণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শার্শা শাখার সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ দাস বলেন, যশোর জেলার বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলার গোড়পাড়া, লক্ষণপুর, বাগআঁচড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পাল সম্প্রদায়ের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। প্লাষ্টিকের তৈরি জিনিসপত্রের জন্য মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন বাজারে খুব কম চলে। তারা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও এই মাটির কাজ করে যাচ্ছেন।