নওগাঁর মহাদেবপুরে আসন্ন সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দিন-রাত প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎ শিল্পীরা। ইতোমধ্যে প্রতিমার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
দু’এক দিনের মধ্যে শুরু হবে রং তুলির আঁচরের খেলা। তুলির আঁচরে ফুঁটিয়ে তোলা হবে প্রতিমার নাক-মুখসহ পূর্ণ অবয়ব। পূজার আগ মুহূর্তে পোশাক পরিধান সম্পন্ন হবে। আবার কোথাও কোথাও চলছে প্যান্ডেল তৈরি আর সাজ-সজ্জার কাজ। উৎসবের রঙে সাজানো হচ্ছে মন্ডপগুলো। মহাষষ্ঠী থেকেই পূজা মন্ডপগুলো ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের শব্দে মুখরিত হবে। এদিকে পূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি থাকবে সেচ্ছাসেবক।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১৬২টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ল্যক্ষ করা গেছে।
কয়েকটি পূজা মন্ডপে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত একমাস ধরে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। প্রতিমা তৈরি কাজের ব্যস্ততার কারণে কারো সাথে কথা বলার সুযোগ নেই মৃৎ শিল্পীদের। খড়-মাটির কাজ শেষ হয়েছে, এখন চলছে ফিনিসিংয়ের কাজ। দিন-রাত পরিশ্রম করে পূজামন্ডপগুলো ধুয়ে মুছে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন চলছে তোরণ তৈরীর।
প্রতিমা তৈরির কারিগর বিপুল বর্মণ জানান, এ বছর ছয়টি প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রতিটি প্রতিমার মাটির কাজ শেষ হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে রং তুলির কাজ শুরু হবে। তিনি আরো জানান, তিন ধরণের কাঠামো অর্থাৎ এক কাঠামো, তিন কাঠামো এবং পাঁচ কাঠামোতে দূর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে তিন কাঠামোর প্রতিমার দাম বেশি। এক কাঠামোর দাম ১০-১৫ হাজার, তিন কাঠামোর দাম ৩০-৫০ হাজার এবং পাঁচ কাঠামোর দাম ১২-২০ হাজার টাকা। তারপরও ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। প্রতিমা তৈরির কারিগর উত্তম বর্মণ জানান, পারিবারিক অন্য কাজ-কর্মের পাশাপাশি পৈতৃক পেশাকে ধরে রাখতে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন তিনি। কেবলমাত্র দুর্গাপূজার সময় প্রায় একমাস হাতে প্রচুর কাজ থাকে। তিনি এ বছর তিনটি প্রতিমা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছেন।
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অজিত কুমার মন্ডল জানান, মহাদেবপুর শান্তি ও সম্প্রীতির উপজেলা। এখানে সকলের সহযোগিতায় সম্প্রীতির মধ্যে দিয়ে প্রতি বছর দুর্গোৎসব পালিত হয়ে থাকে। এরই মধ্যে প্রশাসনের সাথে কমিটি ও উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে প্রতি বছরের মতো এ বছরও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবে।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন জানান, মন্ডপে পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাখা হবে। এর পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির লোকজন এ কাজে সম্পৃক্ত থাকবে। এছাড়াও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে।