একটি গল্প আছে। এক রাজা নিয়মিত দুধ ব্যবসায়ী থেকে দুধ নিতেন খাওয়ার জন্য। কিছুদিন পর রাজা দেখলেন দুধের তেমন স্বাদ পাচ্ছেন না তিনি। ভাবলেন হয়তো দুধওয়ালা সম্প্রতি দুধে পানি মেশানো শুরু করেছে। সে কারণে দুধ পরীক্ষা করে নেয়ার জন্য একজন লোক নিয়োগ করলেন। তিনি দুধ পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিলেই তবে দুধ গ্রহণ করবেন রাজা। কিন্তু দুধ পরীক্ষা করা ব্যক্তি দুধওয়ালার কাছে উৎকোচ হিসেবে কিছু দুধ চাইলেন। না হলে দুধে পানি মেশানো মর্মে রিপোর্ট দেয়ার হুমকি দিলেন। রাজার শাস্তির ভয়ে পরীক্ষা করা ব্যক্তিকে কিছু দুধ দিলেন। বাকিটা পানি দিয়ে পূর্ণ করে দিলেন। এভাবে রাজা দিনে দিনে দুধে স্বাদ না পেয়ে দুধ পরীক্ষা করা লোক বাড়াতে থাকলেন। অন্যদিকে প্রত্যেককে পরীক্ষককে উৎকোচ হিসেবে দুধ দিয়ে বাকি দুধে পানি দিয়ে পূর্ণ করলেন। একদিন রাজা দেখলেন দুধের মধ্যে চিংড়ি মাছ। রাজা রেগে গিয়ে দুধওয়ালাকে ডেকে পাঠালেন। রাজার সামনে করজোড়ে দুধওয়ালা জানালেন, জাহাপনা আপনি যেভাবে দুধ পরীক্ষা করার জন্য লোক বসিয়েছেন। তাতে ভবিষ্যতে দুধে চিংড়ি মাছ কেন। অনেক বড় মাছও পাওয়া যেতে পারে।
এই ঘটনা গল্প হলেও বাস্তবেই তেমন ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়ার লাহিড়ী মোহনপুর এলাকায়। শনিবার নদী থেকে দুধে পানি মেশানোর সময় মোতালেব হোসেন নামের এক দুধ ব্যবসায়ীকে হাতে-নাতে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ভেজাল দুধের পাত্র থেকে তাজা টেংরা মাছ উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, শনিবার সকালে দুধে ভেজাল দেওয়ার খবরে উপজেলার দহকুলা নদীঘাটে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালায় উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুজ্জামান। এ সময় সেখানে নৌকার ওপর ৪০ কেজি দুধের জ্যারিক্যানে প্রায় ৮ কেজি করে নদীর পানি মেশাচ্ছিলেন রায়গঞ্জের ঘুরকা বেলতলার দুধ ব্যবসায়ী আব্দুল মোত্তালেব।
ভ্রাম্যমান আদালত তাকে এ কর্মকাণ্ড করার সময় হাতেনাতে আটক করে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে। এ সময় প্রকাশ্যে ভেজাল দুধ ধ্বংস করার সময় তার ভেতর থেকে একটি জীবন্ত টেংরা মাছ বেরিয়ে আসে।
দুধে পানি মেশানোর সময় আটক মোতালেব হোসেন জানান, প্রতি ১ মন দুধে ৮ কেজি করে পানি মিশিয়ে তারা বাজারে বিক্রি করে থাকেন। নদী থেকে পানি মেশানোর সময় দুধের পাত্রে টেংরা মাছ চলে যায়। পরে পাত্র থেকে তাজা টেংরাটি ধরা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিচার শেষে জব্দ করা দুধ নদীতে ফেলে দেন।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুজ্জান জানান, দুধে ভেজাল মেশানোর খবর পেয়ে শনিবার সকালে সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ওই ব্যবসায়ীকে দুধে নদীর পানি মেশানো অবস্থায় আটক করে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা ভেজাল দুধ ধ্বংস করার সময় তার ভেতর থেকে জীবন্ত টেংরা মাছ পাওয়া গেছে। ওই দুধ ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এই ব্যবসায়ীর মূল মালিককে গ্রেফতার করা যায়নি।
আরিফুজ্জান আরও জানান কঠোর হুশিয়ারি উল্লেখ করেন জানান, দুধে ভেজাল দেওয়ার অভিযোগে এর আগেও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে জেল জরিমানাসহ দুধ-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছি। গোপনে অনেকে আবার একই কাজ করছে। তাদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় উপস্থিত ছিলেন— উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক ও স্যানিটারি ইনসপেক্টর এস এম শহিদুল ইসলাম রন্টু, উল্লাপাড়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরে আলম সিদ্দীকি।